লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী পেদ্রো কাস্তিলিওকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দেড় মাস পর অবশেষে বিজয়ী প্রার্থীর নাম জানতে পারল পেরুর জনগণ। গত ৬ জুন পেরুতে দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় তা পর্যালোচনা করে ফল ঘোষণা করতে দেড় মাস সময় লেগে যায়।
কাস্তিলিওর নির্বাচনী প্রতিপক্ষ ডানপন্থী কিকো ফুজিমোরির আনা নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ পর্যালোচনা শেষে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার রাতে ফল ঘোষণা করে স্বাধীন সংস্থা ন্যাশনাল ইলেকশনস জুরি (জেএনই)।
বিজয়ী প্রার্থী কাস্তিলিও ৫০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ কিকো পেয়েছেন ৪৯ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। কিকোকে ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন কাস্তিলিও। পেরুর বর্তমান প্রেসিডেন্ট এই ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছেন।
২৮ জুলাই পেরুর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন কাস্তিলিও। নির্বাচনী জুরির রায় আসার পর কাস্তিলিও রাজধানী লিমায় ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমরা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করব। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যা কিছুই যাবে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করব।’
গতকাল রাতে নির্বাচনী জুরির রায় ঘোষণার আগে কিকো জানান, সত্য উন্মোচিত হবে বলে তাঁরা আশা। তিনি ফলাফল মেনে নেবেন। একসঙ্গে কাজ করবেন।
৫১ বছর বয়সী কাস্তিলিও একজন সাবেক স্কুলশিক্ষক। মাত্র চার বছর আগে তিনি জাতীয়ভাবে পরিচিতি পান। সে সময় তিনি দেশটির শিক্ষকদের বেতন নিয়ে সফল ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন। এই ধর্মঘটে হাজারো শিক্ষক অংশ নেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে কাস্তিলিও পেরুর খনি ও হাইড্রোকার্বন খাত জাতীয়করণ করার কথা বলেন। নির্বাচনে জয়ী হলে এক বছরে এক লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন বলে তিনি জানান। অপরাধ মোকাবিলায় পেরুতে পুনরায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করার পক্ষে তিনি।
গত ৬ জুনের নির্বাচনের মতো মেরুকরণ আগে দেখেনি পেরু। এই নির্বাচন পেরুর জনগণকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। দেশটির দরিদ্র ও গ্রামীণ ভোটাররা বামপন্থী কাস্তিলিওকে সমর্থন দেন। অন্যদিকে ধনী ও শহুরে ভোটারদের সমর্থন পান ডানপন্থী কিকো।
১৫ জুন ভোট গণনা শেষ হয় বলে জানায় পেরুর ন্যাশনাল অফিস অব ইলেকটোরাল প্রসেসেস (ওএনপিই)। গণনা করা ভোটে কিকোর চেয়ে কাস্তিলিও মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট বেশি পান। ভোট গণনা শেষ হতেই কাস্তিলিও নিজেকে জয়ী দাবি করেন। অন্যদিকে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান কিকো। তিনি নির্বাচনে অনিয়মেরও অভিযোগ তোলেন।
পেরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার দায়িত্ব স্বাধীন সংস্থা ন্যাশনাল ইলেকশনস জুরির (জেএনই)। অনিয়মের অভিযোগগুলো জেএনই পর্যালোচনা করে। এতে নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা বিলম্বিত হয়। এই বিলম্বের কারণে উভয় প্রার্থীর সমর্থকেরা রাজপথে নেমে আসেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পেরুর জনগণ তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন, তা জানতে পারল।
রাজনীতিতে কাস্তিলিও নতুন। তাঁর দলের নাম ফ্রি পেরু পার্টি।
অন্যদিকে কিকো রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর বাবা আলবার্তো ফুজিমোরি পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট। দুর্নীতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয়ে আলবার্তো ২৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। অনেক আগেই রাজনীতিতে কিকোর হাতেখড়ি হয়েছে। ডানপন্থী পপুলিস্ট দল পপুলার ফোর্সের নেতা তিনি। কিকো ২০১১, ২০১৬ ও ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মামলা রয়েছে।