বলিভিয়ায় বিরোধী দলের সিনেটর জানিন আনেজ নিজেকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন। বিক্ষোভের মুখে গত রোববার বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইভো মোরালেস সরে দাঁড়ানোর পর দেশটির পার্লামেন্টে এ ঘোষণা দেন জানিন। পার্লামেন্টের ওই অধিবেশন বর্জন করেন মোরালেসের দলের আইনপ্রণেতারা। অর্থাৎ আনেজ যখন নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, তখন পার্লামেন্টে কোরাম ছিল না।
আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, পার্লামেন্টে কোরাম সংকট থাকার পরও স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে আনেজ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী ব্যক্তি হিসেবে তিনিই প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকতে পারেন। শিগগিরই তিনি নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন।
বলিভিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট, এরপর ক্রমান্বয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রধানের (উচ্চকক্ষ সিনেটের প্রধান ও চেম্বার অব ডেপুটি প্রধান) দায়িত্ব পালনের কথা। তবে মোরালেস পদত্যাগ করার পর তাঁরা সবাই পদত্যাগ করেন।
আনেজের ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে মোরালেস বলেন, ডানপন্থী সিনেটরের উসকানিতে এই অভ্যুত্থান ঘটে।
গত অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইভো মোরালেসের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। তাঁর বিরুদ্ধে বলিভিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। টানা তিন সপ্তাহের বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রথমে তাঁর প্রতি অনুগত থাকলেও পরে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর গত রোববার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মোরালেস পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, তিনি ‘অভ্যুত্থানের’ শিকার এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এর পরপরই মেক্সিকো তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার আশ্বাস দেয়। মোরালেস পদত্যাগ করার পর তাঁর সরকারের অনেক মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্টের স্পিকারও রয়েছেন এ দলে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে বলিভিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ না থাকায় সাময়িক নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি হয়। পদত্যাগের পর মোরালেস বলিভিয়া ত্যাগ করে গতকাল মঙ্গলবার মেক্সিকোতে আশ্রয় নেন।
তবে ইভো মোরালেস সরে দাঁড়ানোর পরও বলিভিয়ার অস্থিতিশীলতায় কোনো উন্নতি ঘটেনি। সোমবারও সেখানে দোকানপাটে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঠে নামে সেনাবাহিনী।
খবরে বলা হয়, সাবেক ডেপুটি সিনেট নেতা আনেজ গতকাল মঙ্গলবার সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নেন। তিনি জানান, একের পর এক শীর্ষ ব্যক্তিদের পদত্যাগের ঘটনায় তিনি এখন সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই সময় অধিবেশন কক্ষে মোরালেসের মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম পার্টির কোনো আইনপ্রণেতা উপস্থিত ছিলেন না।
সাবেক কোকোচাষি মোরালেস ২০০৬ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি দেশটির ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই ও বলিভিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে তিনি প্রশংসা কুড়ান। তবে সংবিধান উপেক্ষা করে গত অক্টোবরে চতুর্থ দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই ভোটে অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করার পর থেকে তিনি প্রচণ্ড চাপে পড়েন। আঞ্চলিক সংস্থা অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তা বাতিলের আহ্বান জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোরালেস নতুন নির্বাচন আয়োজনে সম্মত হন। তবে নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কার্লোস মেসা দাবি করেন, মোরলেস নতুন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
এ পরিস্থিতিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে দেশটির সেনা প্রধান জেনারেল উইলিয়ামস কালিমান মোরালেসকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান। পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় মোরালেস বলেন, তাঁর দলের নেতাদের ওপর চলমান হয়রানি, নিপীড়ন ও হুমকি বন্ধে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তাঁর এই সরে দাঁড়ানোর জন্য তিনি ‘অভ্যুত্থান’কে দায়ী করেন। মেক্সিকোতে পৌঁছে মোরালেস বলেছেন, ‘বেঁচে যখন আছি, তখন রাজনীতিতে থাকব। এই বিশ্বের সব মানুষের নিজেদের বৈষম্য ও অসম্মান থেকে মুক্ত করার অধিকার রয়েছে।’
এদিকে দেশটির অ্যার্টনি জেনারেল হুয়ান লানচিপা গতকাল জানিয়েছেন, নির্বাচনে মোরালেসের জয়কে কেন্দ্র করে সহিংসতায় সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর আগ পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির সংখ্যা তিনজন বলা হচ্ছিল। লানচিপা বলেছেন, সত্য প্রতিষ্ঠিত করার আগ পর্যন্ত এই প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করতে খুঁজে বের করতে হবে। আনেজ নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণার পর লানচিপা দেশবাসীকে শান্ত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।