আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এইরস থেকে ৫৫ কিলোমিটার (৩৪ মাইল) দূরে বেলেন দে এস্কোবার এলাকায় বাস করেন এলেনা গঞ্জালেজ। নিজের বাড়ির পেছনের আঙিনায় একটি স্যুপ কিচেন (লঙ্গরখানা) চালান তিনি। দরিদ্র এলাকার মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য খাবার রান্না করতে করতে ব্যস্ত দিন কাটে তাঁর। হাঁড়িতে অনেক চালের ভেতর অল্প পরিমাণ মুরগির মাংস যোগ করে রান্না করা হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ কোটি ৫০ লাখ অধিবাসীর দেশ আর্জেন্টিনাজুড়ে এমন লঙ্গরখানার সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি।
আর্জেন্টিনায় এমনিতেই উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তবে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। মাত্র তিন মাসে দেশটিতে খাবারের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যাও ক্রমে বাড়ছে। এমন অবস্থায় লাখো ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
আট বছর ধরে লঙ্গরখানাটি চালাচ্ছেন গঞ্জালেজ। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে।’
দরিদ্র মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে গঞ্জালেজের সম্বল হলো রাষ্ট্রীয় সহায়তা, ব্যক্তিগত অনুদান, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুদান, সামাজিকভাবে গড়ে তোলা একটি সবজি বাগান ও কয়েকটি মুরগি। গঞ্জালেজ জানান, তিনি এক দিনও রান্না বাদ দিয়ে থাকতে পারেন না। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘এলাকার শিশুরা আমার দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়, খাবার চায়।’
গঞ্জালেজকে লঙ্গরখানা পরিচালনায় সহায়তা করে বারিওস দে পিয়ে নামের সংগঠন। ২০ বছর আগে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে সংগঠনটি জন্ম নেয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত খাদ্যাভাব এখনো কমেনি।
সম্প্রতি দেশটির সরকার পরিবারগুলোর জন্য মাসিক খাদ্যসহায়তার পরিমাণ ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। ২৪ লাখ পরিবার এ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
স্কুলের ক্যানটিনগুলোতে আরও তিন লাখ মানুষকে খাওয়ানো হচ্ছে। আরও অনেকে ধর্মীয় সংস্থা ও এনজিও থেকে দৈনন্দিন খাবার পাচ্ছে।
অন্যদের খাবারের সংস্থান করছে স্থানীয় দোকানপাটগুলো। বিক্রি না হওয়া খাবার তারা লঙ্গরখানায় দান করে দিচ্ছে। অনেক সময় ক্ষুধার্তদের বাড়িতেও সরাসরি খাবারদাবার পৌঁছে দিচ্ছে তারা।
স্যান আন্দ্রেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী রিকার্ডো রৌভিয়ের এএফপিকে বলেন, ‘লাতিন আমেরিকার অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে আর্জেন্টিনার সামাজিক সহায়তা নেটওয়ার্কের আওতা দীর্ঘ।’
তবে দেশটি এখন সংকটের মধ্যে আছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে সরকারি খরচের পরিমাণ সীমিত করা হচ্ছে। মুদ্রা তহবিল থেকে নেওয়া কোটি কেটি ডলারের ঋণে পুনঃ অর্থায়ন–সংক্রান্ত এক চুক্তির আওতায় এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারিজনিত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে আর্জেন্টিনার ওপরও।
গত বুধবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২২ সালে আর্জেন্টিনার ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে। দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও উচ্চ বেকারত্বেরও আভাস দেওয়া হয়েছে।