কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো প্রয়াত হয়েছেন। এতে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের কাজটা তাঁর ছোট ভাই এবং প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর জন্য আগের চেয়ে সহজ হতে পারে। তবে সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর। তিনি দীর্ঘদিনের বৈরী দেশ কিউবার কমিউনিস্ট সরকারের সঙ্গে কাজ করবেন, নাকি তাঁর বিরোধিতা করবেন—তা এক বড় প্রশ্ন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাউল কাস্ত্রো নিজ দেশে বাজারকেন্দ্রিক সংস্কার শুরু করেছেন। তবে কিউবারই অনেকে বলেন, সেই প্রক্রিয়া বড্ড ধীরগতির। কারণ, ওই উদ্যোগের বিষয়ে ফিদেল কাস্ত্রোর অনাস্থা ছিল। তিনি জীবিত থাকায় সংস্কার কার্যক্রমে একধরনের প্রভাবও বিস্তার করতেন। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে ফিদেল বরাবরই অনাগ্রহী ছিলেন।
বড় ভাইয়ের তুলনায় রাউলের অবস্থান বেশি বাস্তবমুখী। তিনি দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতার ইতি টেনে পারস্পরিক বাণিজ্য চালু করার উদ্যোগ নেন। সেই থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপদেশটিতে মার্কিন পর্যটক এবং বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়তে শুরু করে।
কিউবায় সংস্কারের এসব অগ্রগতি থেমে যেতে পারে যদি ট্রাম্প বাদ সেধে বসেন। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শেষ দিকে তিনি কিউবার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানেরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, হাভানায় প্রায় অর্ধশতক পর চালু হওয়া মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দেবেন।
আর কিউবার সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে চুক্তি করেছেন, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
কিন্তু ফিদেলের মৃত্যুর পর ট্রাম্পের জন্যও নিজের আগের অবস্থান থেকে সরে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মার্কিন জনগণের ইচ্ছা এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে কিউবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উদ্যোগ তিনি এগিয়ে নিতেই পারেন। রাউল কাস্ত্রোরও বয়স হয়েছে, ৮৫। তিনি ২০১৮ সালের শুরুর দিকেই অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প কিউবা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি। কাজেই এ বিষয়ে তিনি কী করতে যাচ্ছেন, সেটা অস্পষ্ট। তবে ফিদেলের মৃত্যুতে তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘তিনি যেসব বেদনাদায়ক ঘটনা, মৃত্যু এবং যন্ত্রণা ঘটিয়েছেন, সেসব মুছে ফেলা যাবে না। তবু আমাদের প্রশাসন কিউবার জনগণের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করব, যাতে তারা উন্নয়ন ও মুক্তির পথযাত্রায় সফল হয়।’
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা রিচার্ড ফেইনবার্গ বলেন, ওবামা কিউবায় যে কার্যক্রম শুরু করেছেন, সেটা থেকে ট্রাম্পের সরে আসার আশঙ্কা এখন কমেছে। ফিদেলের প্রয়াণে অনেক বাধাই সরে গেছে।
তবে কিউবার ক্ষমতা কাঠামোর অভ্যন্তরে কী কী ঘটছে, সেটা বাইরে থেকে আন্দাজ করা বরাবরই কঠিন।
মাঝারি স্তরের আমলারা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে অর্থনৈতিক সংস্কারে গতিসঞ্চারে বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন-কিউবান সম্পর্ক নিয়ে লেখা একটি বইয়ের সহরচয়িতা উইলিয়াম লেওগ্র্যান্ড বলেন, ফিদেল তো আগেই পুরোপুরি অবসর নিয়েছিলেন। তাই তিনি প্রয়াত হওয়ার পর রাউলের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে রাতারাতি বদল ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।