করোনার বিধি ভেঙে জরিমানা খেলেন বলসোনারো

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো
ছবি: রয়টার্স

করোনার বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের দায়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে জরিমানা করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

গতকাল শনিবার বলসোনারোকে এই জরিমানা করা হয়। নিজ দেশে করোনার বিধি ভাঙার দায়ে তাঁকে যে পরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে, তা ১০০ মার্কিন ডলারের সমান।

খবরে বলা হয়, গতকাল ব্রাজিলের সাও পাওলোতে কট্টর ডানপন্থী বলসোনারোর নেতৃত্বে একটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের হয়। এই শোভাযাত্রায় হাজারো মানুষ মোটরসাইকেল নিয়ে অংশ নেয়। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বলসোনারো একটি হেলমেট পরেন। কিন্তু তাঁর পরা হেলমেটের মুখমণ্ডলের অংশ খোলা ছিল। তাঁর মুখে ছিল না কোনো মাস্ক। এই বিষয়টি ছিল সাও পাওলো রাজ্যের করোনাসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন।

আগামী বছর ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে দেশজুড়ে এই ধরনের শোভাযাত্রা করছেন বলসোনারো। করোনা মহামারির মধ্যে সাও পাওলোতে এই ধরনের শোভাযাত্রা না করার জন্য তাঁকে সতর্ক করেছিলেন রাজ্যের গভর্নর জোয়াও দোরিয়া। বলসোনারোর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জোয়াও দোরিয়া বলেছিলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য করোনাসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মানতে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্টকে জরিমানা করা হতে পারে।

গভর্নরের এমন সতর্কতা উপেক্ষা করেই বলসোনারো সাও পাওলোতে শোভাযাত্রা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো—তিনি মাস্ক না পরার পাশাপাশি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় বিপুলসংখ্যক লোকজনের সমাগম ঘটিয়েছেন। তার মাধ্যমে তিনি রাজ্যের করোনাসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করেছেন।

করোনার বিধি মানার ক্ষেত্রে বলসোনারোর শুরু থেকে অনাগ্রহ রয়েছে। এ নিয়ে জোয়াও দোরিয়াসহ একাধিক গভর্নরের সঙ্গে আগে বেশ কয়েকবার বিরোধে জড়ান তিনি।

ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ব্রাজিলের অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৭৩ লাখের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। মারা গেছেন ৪ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি মানুষ।

ব্রাজিলে করোনায় ভয়াবহ সংক্রমণের জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর নীতিকে দায়ী করা হয়। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরে থাকা, বাইরে বের হলে মাস্ক পরার মতো বিধির বিরুদ্ধে বলসোনারোকে প্রায় নিয়মিত কথা বলতে দেখা গেছে।

সাও পাওলোতে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রায়ও মাস্ক পরার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন বলসোনারো। তিনি বলেন, যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের আর মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। এ-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

বলসোনারো বলেন, যাঁরা এই কথা মানেন না, তাঁরা বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করেন না। টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি করোনা ছড়াতে পারেন না।

টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তির করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি আছে কি না, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত খুব কমই বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ আছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিকেও মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে বলছেন।

সাও পাওলো রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ ভঙ্গের দায়ে বলসোনারো, তাঁর ছেলে কংগ্রেসম্যান এদুয়ার্দো, অবকাঠামোবিষয়ক মন্ত্রী তারকিসিও গোমেসকে জরিমানা করা হয়েছে। তাঁরা মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্বের বিধি পরিপালন করেননি। এ জন্য তাঁদের প্রত্যেককে ১০৮ ডলার সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিল বার্তা সংস্থা এএফপি। কিন্তু প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।