লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারিতে সবেচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছে ইকুয়েডর। সেখানকার একটি শহরে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসকেরা দৈনন্দিন যে পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন, এর ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন তাঁরা।
লাতিন আমেরিকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে গয়াকিলের একটি হাসপাতালের ভয়াবহ বর্ণনা দেন চিকিৎসকেরা। সেখানকার চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, কোভিড-১৯ রোগীর লাশে হাসপাতালটির মর্গ ভরে গেছে। বাধ্য হয়ে বাথরুমে লাশ স্তূপ করে রাখতে হচ্ছে।
একজন চিকিৎসক বলেছেন, চিকিৎসকেরা বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বিছানা পুনরায় ব্যবহার করতে সেখানে থাকা লাশ জড়িয়ে রাখতে এবং সংরক্ষণে বাধ্য হয়েছেন।
ইকুয়েডরে কোভিড-১৯ রোগে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৬০০ জন মারা গেছেন। সেখানে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের শিকার হয়েছে গোয়কিল শহরটি। তবে বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
নাম প্রকাশ না করে হাসপাতালটির একজন নার্স বলেন, তিনি যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, এর বিরূপ প্রভাব পেশাগত ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর ওপর পড়েছে। গত মার্চ মাসে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নার্সকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ জন রোগীকে সেবা দিতে হতো। এরপর এত রোগী আসতে শুরু করল যে শুশ্রূষা করতে করতেই তাঁদের জীবন শেষ। করোনায় সংক্রমিত রোগীদের বেড খালি করতে অনেক রোগীকে অন্য কোথাও যেতে বলা হলো, আবার অনেক রোগীকে বের করে দেওয়া হলো।
ওই নার্স বলেন, পরিস্থিতি এমন যে মানুষ একা, দুঃখে, ব্যথায় চিৎকার করতে শুরু করল, কেউ মলত্যাগ করল, কেউ অক্সিজেন চেয়ে হট্টগোল শুরু করল। পরিস্থিতি বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছিল। শুধু হাসপাতাল নয়, মর্গের অবস্থাও অবর্ণনীয় হয়ে উঠল। মর্গের কর্মীরা আর লাশ নিতে আগ্রহী নন। তাই অনেক সময় লাশ মুড়িয়ে বাথরুমে স্তূপ করে রাখা হলো। লাশের সংখ্যা বেড়ে গেলে সেগুলো একসঙ্গে নিতে আসত।
২৬ বছর বয়সী আরেক নার্স ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাথরুমে অনেকে মারা গেছেন, অনেকে মেঝেতে শুয়ে মারা গেছেন, কেউ চেয়ারে বসে মারা গেছেন।’
এপ্রিলের প্রথমার্ধে ইকুয়েডরের গায়াজ প্রদেশে মোট ৬ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গেছেন, যা মাসিক গড়ের তিন গুণ বেশি। কিন্তু সরকার বলছে, সারা দেশে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে ৬০০ জন মারা গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে করোনাভাইরাসে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট লেনিন মরেনো এই পরিস্থিতির সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি মনে করেন, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখাচ্ছে।
গোয়াকিল হাসপাতালের ২৮ বছর বয়সী এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে দুঃখজনক পরিস্থিতির কথা বলেছেন। তিনি বলেন, জরুরি ওয়ার্ডের করিডরেও লাশ ভর্তি, কারণ মর্গে কোনো জায়গা নেই। ২০ থেকে ২৫ লাশ সরানোর জন্য এখনো অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
একজন চিকিৎসক বলেন, ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় গিয়ে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। পা ব্যথা হয়ে যায়, দুঃস্বপ্ন তাড়া করে। বাড়িতেও তাঁদের কঠোর আইসোলেশনে থাকতে হয়। পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই। এটা তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে।