আর্জেন্টিনায় ভোটগ্রহণ চলছে

আলবার্তো ফার্নান্দেজ (বামে) ও তাঁর রানিং-মেট সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনার। ছবি: এএফপি
আলবার্তো ফার্নান্দেজ (বামে) ও তাঁর রানিং-মেট সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনার। ছবি: এএফপি

ডিয়েগো ম্যারাডোনার দেশে আজ রোববার চলছে ভোটগ্রহণ। আর্জেন্টিনার সঙ্গে সঙ্গে ম্যারাডোনার নাম নিতে হলেও তিনি এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আর্জেন্টিনার স্থানীয় সময় আজ সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। সর্বশেষ রাত সাড়ে ১০টায় (আর্জেন্টিনা সময় বেলা দেড়টা) পাওয়া খবর অনুযায়ী, বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই দেশটিতে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটগ্রহণ চলবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত, যার ফল ঘোষণার কথা রয়েছে স্থানীয় সময় রাত ৯টায়। আর এ ভোটে এখন পর্যন্ত পেরোনিস্ট নেতা আলবার্তো ফার্নান্দেজই এগিয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বুয়েন্স আইরেস টাইমস।

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলা দেশটির এবারের নির্বাচনের মূল লড়াইটি হচ্ছে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত দুটি নীতির মধ্যে। একটি দরিদ্রবান্ধব পেরোনিস্ট নীতি, সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনারকে রানিং-মেট হিসেবে নিয়ে যার নেতৃত্বে রয়েছে আলবার্তো ফার্নান্দেজ। আর অন্য পক্ষে ব্যবসায়ীবান্ধব মুক্তবাজার নীতি নিয়ে রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মরিসিও মাক্রি। প্রথম পর্বের এ ভোটে এখন পর্যন্ত বুথফেরত ভোটারদের ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্যমতে, এ লড়াইয়ে ৬০ বছর বয়সী আলবার্তো অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন।

প্রথম পর্ব বলা হচ্ছে, তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে থাকা আর্জেন্টাইনদের মধ্যে ব্যাপক সংশয় বিরাজ করছে। আর আর্জেন্টিনার আইন অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী যদি ৪৫ শতাংশ ভোট পান কিংবা ৪০ শতাংশ ভোট ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১০ শতাংশ ভোটে এগিয়ে থাকেন তবেই তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। নইলে নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে ফের ভোটাভুটি হবে। দেশটির বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা বলছেন, মাক্রির প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তারপরও আলবার্তোর পক্ষে এবারের ভোটে সরাসরি জিতে আসার সম্ভাবনা কম।

ভোটের দিন সকালেই আলবার্তো ফার্নান্দেজকে বেশ খোশমেজাজে বুয়েন্স আইরেস পার্কে দেখা গেছে বলে জানা গেছে স্থানীয় পত্রিকা মারফত। আত্মবিশ্বাসী এ নেতা বুয়েন্স আইরেস টাইমসকে বলেন, ‘আজ আমাদের সবাইকে শান্ত থাকতে হবে। আর্জেন্টাইনরা আজ ভোট দিচ্ছেন। এটি আমাদের সবার জন্যই আনন্দের এক দিন।’

আলবার্তো ফার্নান্দেজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে তিনি সবল করবেন। ঐক্যের ডাক দেওয়া এ নেতা জোর দিয়ে বলছেন যে, তিনি ব্যর্থ হবেন না। কিন্তু তারপরও সংশয় কাটছে না। কারণ, এই ভোটের দিনই দেখা মিলেছে মার্টিনের মতো ব্যক্তিদের, যারা নগদ অর্থ নিয়ে ছুটছেন ডলারে বদলে নেবেন বলে। ৫০ বছর বয়সী চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্টিনের সোজা কথা, তিনি ফার্নান্দেজকে বিশ্বাস করেন না।

শুধু মার্টিন নন, এএফপি জানাচ্ছে, প্রাথমিক নির্বাচনে আলবার্তো ফার্নান্দেজ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে প্রার্থিতা নিশ্চিত করার পরপরই আর্জেন্টাইনরা নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্তত ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছেন। ফলে যেই নির্বাচনে জিতুন না কেন, তাঁর সামনে এক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে নিঃসন্দেহে।

এ বিষয়ে পিটারসন ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের গবেষক মনিকা ডি বোল এএফপিকে বলেন, ‘ফার্নান্দেজ জিতলেন, আর মাক্রি হারলেন; বিষয়টা অত সরল নয়। এ ভোট হচ্ছে সংকটকালে। আর এমন সময়ে মানুষের ধৈর্য খুব কম থাকে। সামনে অজস্র প্রশ্ন অপেক্ষা করছে। ফার্নান্দেজ জিতলে, তাঁকেই এ প্রশ্নগুলোর মোকাবিলা করতে হবে।’

আরও পড়ুন : মেসি–ম্যারাডোনার দেশের ভবিষ্যৎ কোন পথে?