ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত মাসে ইউক্রেন সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। মোদির ওই ঐতিহাসিক সফর ও তাঁর শান্তির বার্তার প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত শনিবার বাইডেন ও মোদির মধ্যকার বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ প্রশংসা করা হয়। এ সময় দুই নেতা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন পরিস্থিতিসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন। এর মধ্যে স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে বাইডেনের ডেলাওয়ারের উইলমিংটনের বাড়িতে তাঁদের এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা বিষয় উঠে আসে। পরে গণমাধ্যমে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ইউক্রেন সংকট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, সংঘাতের সব পক্ষের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে।
বৈঠকের যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, আলোচনায় বাইডেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করতে বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলোর সংস্কারের উদ্যোগকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নয়াদিল্লির স্থায়ী সদস্যপদের বিষয়টিও রয়েছে।
যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, বাইডেন বিশ্বমঞ্চে ভারতের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার জন্য ভারতের প্রশংসা করেন। বিশেষ করে জি-২০ ও বৈশ্বিক দক্ষিণ ঘিরে মোদির নেতৃত্ব এবং একটি মুক্ত, অবাধ ও সমৃদ্ধ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিশ্চিত করতে কোয়াডকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন বাইডেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করা থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে সংঘাতের বিধ্বংসী পরিণতি মোকাবিলা করার জন্য ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টার অগ্রভাগে রয়েছে।
এ ছাড়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদির পোল্যান্ড ও ইউক্রেনে ঐতিহাসিক সফরের জন্য বাইডেন প্রশংসা করেছেন, যা ছিল কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর।
এ ছাড়া মোদি গত জুলাই মাসে মস্কো ও পরে গত মাসে কিয়েভ সফর নিয়ে ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিলেন।
বিক্রম মিশ্রিকে দুই নেতার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপট ও ভারতের পক্ষ কোনো ধরনের শান্তি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, নয়াদিল্লি বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, ‘এটা স্পষ্টত যে এ ধরনের আলোচনার ক্ষেত্রে ভারতের যুক্ত থাকার বিষয়টিকে লোকজন মূল্য দেয়। আমরা একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছি। তবে বর্তমান পর্যায়ে এর ফলাফল হতে চলেছে এমন কোনো কিছু নয়। কারণ, এখনো বেশ কিছু কাজ করা বাকি আছে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ২৩ আগস্ট কিয়েভে বৈঠক করেন মোদি। তখন তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে সময় নষ্ট না করে অবশ্যই আলোচনায় বসতে হবে। এ অঞ্চলে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভারত সক্রিয় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
মোদি বলেন, সংঘাত শুরুর পর থেকে ভারত শান্তির পক্ষে। এ সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অবদান রাখতে প্রস্তুত।
মোদি ও বাইডেনের বৈঠকে দুই নেতা মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথসহ নৌ চলাচলের স্বাধীনতা ও বাণিজ্য সুরক্ষার জন্য তাঁদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁরা সেমিকন্ডাক্টর, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া দুই নেতা স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে ঘনিষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারত্ব নিয়ে কথা বলেন।