নিওলিবারেল বাণিজ্য ও অর্থব্যবস্থা গ্রহণ করে আজকের অবস্থানে চীন, ভারত ও ব্রাজিল। এই তিন দেশসহ রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত জোট ব্রিকসের রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে। জি-২০ সম্মেলনের যৌথ ইশতেহারে ইউক্রেন হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার নিন্দা জানানো হয়নি। এটা কি চীন ও ভারতের কাছে তার নতিস্বীকার?
১৯১৫ সালের ২৫ নভেম্বর। তারিখটা ইতিহাসে কালো কালিতে দাগানো রয়েছে। সেদিন প্রথমবারের মতো মুখোমুখি সাক্ষাতে বসেছিলেন ব্রিটেনের তৎকালীন প্রতিনিধি মার্ক সাইকস ও ফ্রান্সের ফ্রাঁসোয়া জর্জ-পিকো। প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে ইউরোপের ‘দুর্বল মানব’ তুরস্কের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগির জন্য একটি মানচিত্র তৈরির দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে বর্তেছে। ব্যাপারটায় রাশিয়ারও আগ্রহ রয়েছে, তবে সে নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত।
সাইকস-পিকোর টেবিলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি মানচিত্র রাখা। সাইকস পকেট থেকে একটা পেনসিল বের করলেন, পিকো বের করলেন এক ফুট লম্বা স্কেল। ওই পেনসিল ও স্কেল দিয়েই পরবর্তী পাঁচ মাসে তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের কোন অঞ্চল কার নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা ঠিক করে ফেললেন।
আঁকাবাঁকা কোনো লাইন নয়, স্কেল দিয়ে তেমন দাগ কাটা কঠিন। কে কোথায় থাকে, তার কোনো তোয়াক্কা না করেই সোজাসুজি দাগ কেটে তাঁরা এক নতুন মানচিত্র তৈরি করে দিলেন।
কার ভাগে কোন অঞ্চল থাকবে, সেটা বোঝাতে তিন রং দিয়ে সেই মানচিত্র রাঙানো হলো। এক ভাগ ব্রিটেনের, এক ভাগ ফ্রান্সের, আরেক ভাগ রাশিয়ার। ১৯১৬ সালের মার্চে লন্ডনে ও প্যারিসে সেই মানচিত্রের ভিত্তিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে গোপন চুক্তি হয়ে গেল। এই চুক্তির নামই সাইকস-পিকো চুক্তি।
তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্য ভাগাভাগির সেই ঔপনিবেশিক ঘটনার পর ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনো পৃথিবী ভাগাভাগির চেষ্টা থেমে নেই। পাত্র–পাত্রী বদলেছে, বিভক্তির পদ্ধতি বদলেছে। যত সহজে মানচিত্রের ওপর পেনসিলের দাগ দিয়ে বিশ্বকে ভাগ করা যেত, এখন তা আর সম্ভব নয়।
কারণ একটাই, আর তা হলো মাঠে এখন নতুন নতুন খেলোয়াড় এসেছে। পুরোনো খেলোয়াড়, অর্থাৎ ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর অবস্থা এখন কিছুটা হলেও নড়বড়ে, অন্যদিকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে একসময়ের শাসিত উপনিবেশ, যাদের নতুন নাম বৈশ্বিক দক্ষিণ।
এই পরিবর্তিত বাস্তবতার সাক্ষ্যভাষ্য দেখতে চাইলে সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনের দিকে চোখ রাখলেই কিছুটা আঁচ করা যাবে।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং ধনবান হওয়ার পথে আগুয়ান এমন ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আফ্রিকান ইউনিয়ন সমন্বয়ে গঠিত জি-২০ জোটের আদি লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
একে অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে সহযোগিতার মাধ্যমে, পূর্বসম্মত নীতিমালার ভিত্তিতে যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থব্যবস্থা পরিচালনা সম্ভব হয়, তাতে আমাদের অর্থাৎ সংস্থার সদস্যদেশগুলোর লাভ। এই মোদ্দা লক্ষ্য সামনে রেখে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জি-২০। তারও আগে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল জি-৭, যার সদস্য কেবল সবচেয়ে ধনী সাতটি দেশ। এর কোনোটিতেই ভাগাভাগি কথাটা বলা হলো না বটে। তবে এ কথা বুঝতে কারও বাকি থাকল না, তাদের আসল উদ্দেশ্য বিশ্বব্যবস্থাকে নিজেদের হাতের মুঠোয় রাখা।
একই উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কয়েক দশকের নানা আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিওটিও) গড়ে তোলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হাতে লিখিতভাবেই চাবুকখানা থাকল। এর বাইরে অবশ্য জাতিসংঘও ছিল, তারও উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয়। কিন্তু বি-উপনিবেশীকরণের তোড়ে একগাদা দরিদ্র দেশ জাতিসংঘে ঢুকে পড়ায় ইচ্ছামতো ছড়ি ঘোরানো কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে। অতএব জি-৭, জি-২০ ইত্যাদি গড়ে তোলা হলো।
সমস্যা হলো, গত ২০-২২ বছরে পৃথিবীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গতিপথ বা ট্রাজেকটরি যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত অনুশাসন না মেনে ভিন্নপথে এগিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ওয়াশিংটন চেয়েছিল বিশ্বব্যবস্থা তার নেতৃত্বে এক মেরুর ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে।
বাস্তবে তা ঘটেনি। কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তার অর্থনৈতিক নেতৃত্ব হারিয়েছে। একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে তার সামরিক নেতৃত্বও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করুণ অভ্যন্তরীণ সংকট। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রিপাবলিকান নেতৃত্ব ‘বিশ্বনেতা’ হওয়ার বদলে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখন আর সেই ‘এম্পায়ার’ নয়, যে ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা চালিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হওয়ার অর্থ পশ্চিম ইউরোপীয় জোটের অর্থনৈতিক ও সামরিক কবজির জোর কমে আসা। ২০০৮ সালে যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শিকার তারা হয়েছে, এত দিনেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা এই সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এসব ঘটনার প্রভাবে বৈশ্বিক নেতৃত্বে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করতে এগিয়ে আসে চীন ও ভারত। বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা সত্ত্বেও এই দুটি দেশ যেভাবে বিপদ সামলে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তা দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। এখন তারা সেই সাফল্যের পুরস্কার চায়।
জি-৭-এর ও জি-২০ জোট গঠনের আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে জি-৩৩ ও জি-২২ গঠনের চেষ্টা করেছিল। লক্ষ্য একটাই, পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার বাস্তবতা মেনে এই জোটকে আরও বেশি প্রতিনিধিত্বশীল করে তোলা। কিন্তু জি-২০ জোটে ঢুকেও সন্তুষ্ট থাকেনি বৈশ্বিক দক্ষিণের আগুয়ান দেশগুলো।
নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় তারা গড়ে তোলে ব্রিকস। চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা—এই পাঁচটি দেশ নিয়ে ২০০৯ সালে যে জোট যাত্রা শুরু করে, এখন তার গুরুত্ব অস্বীকার করার জো নেই। রাশিয়া থাকলেও এটি মূলত বৈশ্বিক দক্ষিণের একটি পাল্টা বা বিকল্প জোট। যুক্তরাষ্ট্র নয়, আমরাই বিশ্বের বাণিজ্য ও অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করব—এই অলিখিত বিশ্বাস থেকে জোটটি খোলামেলা প্রথাগত পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কেনই–বা দেবে না। একদিকে পশ্চিম অস্তে যাচ্ছে, অন্যদিকে দক্ষিণ—নিদেনপক্ষে এই জোটভুক্ত দক্ষিণি দেশগুলো উদিত হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিশোর মাহবুবানি ঠিকই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জি-৭ হচ্ছে গতকালের ঘটনা, আর ব্রিকস আগামীকালের। পশ্চিমা দেশগুলোতে যে ১২ শতাংশ মানুষ বসবাস করে, তারা হয়তো এখনো এই সহজ সত্যটা বুঝতে পারছে না। কিন্তু বাকি যে ৮৮ শতাংশ মানুষ বৈশ্বিক দক্ষিণের বাসিন্দা, তারা সে কথা ঠিকই জানে।
বৈশ্বিক দক্ষিণের যেসব দেশ আমাদের নজর কেড়েছে বিশেষত চীন, ভারত, ব্রাজিল—তারা জি-৭ নিয়ন্ত্রিত নিওলিবারাল বাণিজ্য ও অর্থব্যবস্থা কমবেশি গ্রহণ করেই আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে। এই ব্যবস্থার প্রধান মন্ত্র হলো ডি-রেগুলেশন বা আর্থিক ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার। বিশ্বায়নের সবচেয়ে বড় ফায়দা তারাই পেয়েছে। কিন্তু তারা পশ্চিমা নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করবে, এই হিসাব যুক্তরাষ্ট্র মাথায় নেয়নি।
চীন ক্রমেই তার খোলনলচে বদলে ফেলবে—এই আশায় আর্থিক ব্যবস্থাপনার ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও চীনকে ডব্লিউটিওতে স্থান দেওয়া হয়। এর পেছনেও ছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ওকালতি। কিন্তু নিওলিবারাল অর্থনৈতিক প্রশাসন যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থে বিপজ্জনক, নব্বইয়ের দশকে এবং ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী মন্দাবস্থা তার প্রমাণ। জি-৭ নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ধস নামলে পুরো বিশ্বই সংকটে পড়ে যায়। এই সংকট এড়াতে বৈশ্বিক দক্ষিণকে ভিন্নপথ অনুসরণের কথা ভাবতে হয়।
আরও পরে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ সংকটের সময় দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্র ও তার ধনী মিত্ররা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। তাদের উদ্ভাবিত টিকা ভিক্ষা হিসেবে দক্ষিণকে কিছু দিলেও তা উৎপাদনের অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে তারা অনড় রয়ে যায়। ভিন্ন চিন্তার সেটিও একটি কারণ।
বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় দক্ষিণের দেশগুলোর ভূমিকা বাড়ছে—এই বিবেচনা থেকে জি-৭ ও জি-২০ উভয় ফোরামেই নীতিমালা প্রশ্নে কিছুটা শৈথিল্য দেখা গেছে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে হলে ওদের স্বার্থকে উপেক্ষা করা যাবে না—এই চিন্তা থেকে উভয় ফোরামের আলোচ্যসূচিতে পরিবর্তন এসেছে।
বিশেষত ১৯৯৭-৯৮ সালের এশীয় অর্থব্যবস্থার সংকটের পর ঋণভার লাঘব বা বৈদেশিক ঋণের কার্যকারিতার মতো বিষয় তাদের আলোচ্যসূচিতে এসেছে। এটি একদিকে বাস্তবতার প্রতি মাথা ঝোঁকানো, অন্যদিকে জি-২০ জোটকে অধিক অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টা বলা যেতে পারে।
কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে, শুধু নামমাত্র বা লোক দেখানো মাথা ঝোঁকানোতে বৈশ্বিক দক্ষিণ আর খুশি নয়। তারা বিশ্বসভায় নিজের জন্য যোগ্য আসনটুকু চায়। ব্রিকসের অধীনে একটি পাল্টা বিশ্বব্যাংক গঠন, একটি বিকল্প আন্তর্জাতিক মুদ্রার প্রচলন ইত্যাদি সে চেষ্টার উদাহরণ। এসব চেষ্টার ফল খুব ব্যাপক না হলেও জোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।
নয়াদিল্লিতে সর্বশেষ ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ বৈঠকেই তার প্রমাণ মিলল। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি ছিল ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা। এর আগের বছর ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশিত ভাষাতেই সে হামলার নিন্দা করা হয়।
কিন্তু এবার যে চূড়ান্ত ইশতেহার গৃহীত হয়, তাতে কোথাও রাশিয়াকে নিন্দা করে একটি কথাও বলা হয়নি। তার বদলে সর্বসম্মত নীতিমালা হিসেবে এক দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়—এমন কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেবে না, শুধু এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। মূলত ভারত ও চীনের চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এই তাৎপর্যহীন বক্তব্য মেনে নিতে হলো।
বলা বাহুল্য, এতে যুক্তরাষ্ট্রের কেউ কেউ বেজায় চটেছে। তাদের মধ্যে একজন হলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এক নিবন্ধে প্রস্তাব রেখেছেন জি-২০ ভেঙে দেওয়া হোক। ডজন ডজন বৈঠক, সলাপরামর্শ ও যৌথ ইশতেহারের ফলে পৃথিবীর বনরাজির আংশিক ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই জি-২০-এর পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়।
বোল্টনের মতো লোকও স্বীকার করেছেন, এই সম্মেলনের যদি কারও লাভ হয়ে থাকে, সে হলো ভারত। সে এখন বিশ্বসভায় একজন বড় খেলোয়াড়। পাশাপাশি এ–ও ঠিক, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক দক্ষিণের এই দুই প্রধান সদস্য চীন ও ভারতের রেষারেষি ও প্রতিযোগিতাও সবার সামনে প্রকাশিত হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই বৈঠকে আসেননি। অথচ মাত্র দুই সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে তিনি সভাসদসহ বেশ জাঁকিয়েই অংশ নিয়েছেন।
ভারতের সঙ্গে চীনের বিরোধ পুরোনো। সপ্তাহ তিনেক আগে চীন যে নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ আরও বেড়েছে। প্রেসিডেন্ট সির অনুপস্থিতির সেটি একটি কারণ হতে পারে। তবে বড় কারণ সম্ভবত নেতৃত্ব প্রশ্নে ভারতের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
চীন ইতিমধ্যে রাশিয়াকে বগলদাবা করে পশ্চিমাবিরোধী একটি ‘মিনি-জোট’ গড়ে তুলেছে। ভারত সে জোটের সদস্য নয়, সদস্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। কারণ, নয়াদিল্লি মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছে, তার ভবিষ্যৎ চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের সঙ্গে।
সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চীনবিরোধী কৌশলগত সংলাপ কোয়াডে দেশটি যোগ দিয়েছে। আল-জাজিরার এক ভাষ্যকার বলেছেন, ‘রাশিয়া ভারতের অতীত, যুক্তরাষ্ট্র তার ভবিষ্যৎ।’
একটি কার্যকর জোট হিসেবে বৈশ্বিক দক্ষিণ বিশ্বসভায় কীভাবে ও কতটা নিজেদের জন্য স্থান করে নেবে, হয়তো এই দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই তা নির্ধারিত হবে।