ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানি চলছে
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানি চলছে

আইসিজেতে শুনানি

ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারির অবসান সম্ভব

ফ্রান্স ১৯৬২ সালে আলজেরিয়া থেকে ১০ লাখের বেশি বসতি স্থাপনকারীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। আলজেরিয়ায় বসতি স্থাপনকারীরা শুধু যে সংখ্যায় বেশি ছিল, তা নয়, এখন অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের চেয়ে তারা বেশি প্রতিষ্ঠিত ছিল।

ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েল নিয়মিত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। নিজভূমে ফিলিস্তিনিরা হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। অধিকৃত ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ করে ইসরায়েল এসব ভূমি মূলত নিজের করে নিচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদারির অবশ্যই অবসান হতে হবে। ইতিহাস বলে, ইসরায়েলের দখলদারির অবসান সম্ভব।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানিতে অংশ নিয়ে জর্ডান, ওমান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, নরওয়েসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা শুক্রবার এসব কথা বলেন। তবে শুনানিতে অংশ নিয়ে ইসরায়েলি দখলদারি নিয়ে কোনো অভিমত না দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। যদিও ইসরায়েলি দখলদারিকে অবৈধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুই রাষ্ট্র গঠনের তত্ত্বের পক্ষেই বলেছে দেশটি। শুক্রবার পঞ্চম দিনের শুনানিতে আরও অংশ নেয় কাতার, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুদান ও স্লোভেনিয়া।

আইসিজেতে শুক্রবারের শুনানিতে পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন ও বিচারমন্ত্রী আহমেদ ইরফান আসলাম। তিনি বলেন, ইসরায়েল চাইছে অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ড থেকে ইহুদিদের সরে যাওয়া সম্ভব নয়—এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে। কিন্তু ইতিহাস বলে, যেমন পরিস্থিতিই হোক, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। এ সময় তিনি ১৯৬২ সালে আলজেরিয়ার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ওই সময় ফ্রান্স আলজেরিয়া থেকে ১০ লাখের বেশি বসতি স্থাপনকারীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। আলজেরিয়ায় বসতি স্থাপনকারীরা শুধু যে সংখ্যায় বেশি ছিল, তা নয়, এখন অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের চেয়ে তারা বেশি প্রতিষ্ঠিত ছিল। পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী বলেন, দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে অবশ্যই শান্তির মূল ভিত্তি করতে হবে।

ইসরায়েলি দখলদারি নিয়ে কোনো অভিমত না দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। যদিও ইসরায়েলি দখলদারিকে অবৈধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুই রাষ্ট্র গঠনের তত্ত্বের পক্ষেই বলেছে দেশটি।

শুনানিতে ওমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আবদুল্লাহ বিন সালেম বিন হামাদ আলহার্দি। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ প্রতিদিন হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েল গত কয়েক দশকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্থায়ী দখলদারি নিশ্চিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আদালতের উদ্দেশে ওমানের প্রতিনিধি বলেন, আদালতকে এমন একটি আইনি পথ খুঁজে বের করতে হবে, যাতে ইসরায়েল ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অবৈধ স্থাপনা সম্প্রসারণ বন্ধ করাসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে। একই সঙ্গে অবৈধ প্রশাসনিক কাঠামোও বন্ধ করে।

ইসরায়েলি দখলদারি নিয়ে আইসিজে কোনো মতামত দিলে তা শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করতে পারে—এমন যুক্তি দিচ্ছে কোনো কোনো দেশ। কিন্তু এমন যুক্তি দেওয়া অযৌক্তিক। কারণ, এই মুহূর্তে বলার মতো কোনো শান্তি আলোচনা চলমান নেই।

আইন লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনটো মারসুদি শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, ইসরায়েল সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেই চলেছে। ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারি আর গণহত্যা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটা স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ন্যূনতম ইচ্ছা ইসরায়েলের নেই। তিনি বলেন, কোনো দেশেরই দুর্বল কোনো দেশের বিরুদ্ধে যা খুশি তা করার অধিকার নেই। এটার জন্য আন্তর্জাতিক আইন করা হয়েছে।
রেনটো মারসুদি বলেন, ইসরায়েলি দখলদারি নিয়ে আইসিজে কোনো মতামত দিলে তা শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করতে পারে—এমন যুক্তি দিচ্ছে কোনো কোনো দেশ। কিন্তু এমন যুক্তি দেওয়া অযৌক্তিক। কারণ, এই মুহূর্তে বলার মতো কোনো শান্তি আলোচনা চলমান নেই। আর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পুরো সংঘাত নিয়ে আইসিজে কোনো রায় দিতেও যাচ্ছে না।

ফিলিস্তিনের জনগণ প্রতিদিন হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে
আবদুল্লাহ বিন সালেম বিন হামাদ আলহার্দি, ওমানের প্রতিনিধি ,আইসিজের শুনানিতে

নামিবিয়ার বিচারমন্ত্রী ইভোনে দাউসাব শুনানিতে অংশ নিয়ে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলারিকে অবৈধ ঘোষণা করতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানান।
শুনানিতে অংশ নিয়ে জর্ডান বলেছে, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অবিলম্বে ইসরায়েলের দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে।

শক্তি প্রয়োগের যৌক্তিক সীমা ছাড়িয়েছে ইসরায়েল

আয়ারল্যান্ড আইসিজের শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যে শক্তিপ্রয়োগের যৌক্তিক সীমা ছাড়িয়ে গেছে ইসরায়েল। শুনানিতে আয়ারল্যান্ড কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ইসরায়েলের দখলে রাখার আইনি পরিণতির বিষয়গুলো তুলে ধরে।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে গত সোমবার এ শুনানি শুরু হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হওয়া এ শুনানিতে পর্যায়ক্রমে ৫০টির বেশি দেশ ও ৩টি সংগঠনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। শনিবার ও রোববার শুনানি বন্ধ থাকবে। আগামী সোমবার তুরস্ক, স্পেন, আরব লিগসহ আটটি দেশ ও সংগঠন শুনানিতে অংশ নেবে।
এ শুনানির সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে করা দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার যোগসূত্র নেই।