তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আগামী ৯ মে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। এ সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তুরস্কের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা আজ শুক্রবার এরদোয়ানের ওয়াশিংটন সফরের তথ্য জানিয়েছেন। এটা হবে বাইডেন প্রশাসনের আমলে এরদোয়ানের প্রথম ওয়াশিংটন সফর।
২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে প্রথম ওয়াশিংটন সফর করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এরদোয়ান ও ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। কিন্তু ২০২০ সালে বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়নি। আঙ্কারার পক্ষ থেকে বাইডেন ও এরদোয়ানের বৈঠকের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ওই দুই সদস্যদেশের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। তবে গত জানুয়ারি মাসে ন্যাটো জোটে সুইডেনকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আঙ্কারার অনুমোদনের পর দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। এর আগে ২০ মাসের বেশি সময় ধরে সুইডেনের সদস্যপদ নিয়ে ওয়াশিংটনের হতাশা বাড়ছিল। তবে দুই দেশের মধ্যে এখনো সিরিয়া নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তুরস্ক ওই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী বলে মনে করে।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে আঙ্কারার ওপর রাশিয়াকে অস্ত্রসহ অন্য সরঞ্জাম বন্ধে চাপ রয়েছে। ওয়াশিংটন মনে করে, এসব সরঞ্জাম ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে মস্কো।
আঙ্কারার নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবশ্য এরদোয়ানের সফর নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেননি। তবে তুরস্কের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইব্রাহিম কালিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে এরদোয়ানের সফর ও দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলার মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তবে মার্কিন দূতাবাস ও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাইডেন ও এরদোয়ান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবেন। এরদোয়ান বরাবরই গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। তাঁদের বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে। তুরস্ক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়া অনুমোদন করেছে।
আরটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দলের মুখপাত্র ওমর সেলিক বলেছেন, রাশিয়ার মস্কোয় ক্রোকাস সিটি হলে হামলার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণত অন্য দেশের (রাষ্ট্রীয়) পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। বৃহস্পতিবার তুরস্কের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) মুখপাত্র। ২২ মার্চ সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে হামলার ঘটনা ঘটে। বন্দুকধারীরা কনসার্ট হলে ঢুকে ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। হলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ১৪৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত তিন শতাধিক।
হামলার এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পাকড়াও করেছে রাশিয়ার নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে চারজনকে ‘হামলাকারী’ হিসেবে কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করেছে।
একেপির উপ-চেয়ারম্যান সেলিক তুর্কি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিকে বলেন, এটা সুস্পষ্ট যে কোনো রাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের পেশাদার কর্মকাণ্ড করা অসম্ভব। এ ধরনের ঘটনায় সব সময় পৃষ্ঠপোষক (রাষ্ট্রীয়) থাকে।
মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে হামলার ঘটনায় রাশিয়ার প্রতি তুরস্ক আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেন সেলিক। ক্রোকাস সিটি হলে হামলার দায় নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএস-কে)।
ইউক্রেন বলছে, এই হামলার ঘটনায় কিয়েভের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। হামলার ঘটনায় রাশিয়ার নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সবাই তাজিক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর।
হামলাকারীদের ‘উগ্র ইসলামপন্থী’ বলে বর্ণনা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাষ্য, এ হামলার ঘটনায় ইউক্রেনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে আইএস-কে যে একাই এই হামলা চালিয়েছে, সে ব্যাপারেও তারা কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।
রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হামলা চালাতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা যে ইউক্রেন থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ক্রিপ্টোকারেন্সি (ডিজিটাল মুদ্রা) পেয়েছেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হামলায় অর্থের জোগান দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি এখনো তাঁর পরিচয় প্রকাশ করেনি।