কোন প্রাণীর কারণে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ যায়? না, এর উত্তর হাঙর হবে না। যদিও হলিউডি সিনেমায় মানুষের জন্য সবচেয়ে হুমকি হিসেবে তুলে ধরা প্রাণীর তালিকায় থাকে হাঙর, তাণ্ডব চালানো উল্লুক। তবে সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণীর আকার আরও অনেক ছোট। রেজরের মতো ধারালো দাঁতের কামড়ে নয়, বরং প্রাণী থেকে ছড়ানো রোগে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তাহলে কোন প্রাণীর কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ যায়?
সিংহকে বলা হয় ‘বনের রাজা’। হিংস্র এই শিকারির রয়েছে শক্ত চোয়াল। প্রাণীটির এক কামড়ে ভেঙে যেতে পারে আপনার হাড়, গুঁড়িয়ে যেতে পারে আপনার খুলি।
সিংহ দলবদ্ধভাবে চুপিসারে শিকারকে অনুসরণ করে। এরপর ঘিরে ধরে সেটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভয়ংকর এই প্রাণীর কারণে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রাণ যায় ২০০ মানুষের।
জলহস্তী তৃণভোজী। তবে আগ্রাসী স্বভাবের কারণে এটি বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর প্রাণী। এর এক কামড়ে মানুষের শরীর দ্বিখণ্ডিত হয়ে যেতে পারে। চোয়ালে রয়েছে সিংহের চেয়ে তিন গুণ বেশি শক্তি।
জলহস্তী তার বসবাসের এলাকার দিকে কাউকে এগিয়ে যেতে দেখলেই আক্রমণ করে বসে। নিজের সুরক্ষায় নৌকা উল্টে দেয়। এতে করে ভুলভাবে প্রাণীটি শিকারি হিসেবে পরিচিত। জলহস্তীর আক্রমণে প্রতিবছর ৫০০ মানুষ প্রাণ হারান।
নিছক আকারের কারণে হাতি বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর প্রাণী। হাতি নানাভাবে মানুষের ওপর হামলা করতে পারে। তবে প্রাণীটির পায়ের নিচে পড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ যায়। আফ্রিকার হাতির ওজন আট টন পর্যন্ত হতে পারে।
হাতি শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে মানুষকে ওপরে তুলে ছুড়ে মাটিতে ফেলে দিতে পারে। এতে মানুষের হাড়গোড় ভেঙে যায়। হাতির কারণে প্রতিবছর প্রাণ যায় ৬০০ মানুষের।
হিংস্র প্রাণী হিসেবে কুমিরের পরিচিতি বিশ্বজোড়া। দাঁতের গঠনই বলে দেয় এই সরীসৃপ কতটা ভয়ংকর। মিঠা ও নোনা উভয় পানিতে থাকে কুমির।
কুমির যত শক্তিতে কামড় দেয়, তা যেকোনো প্রাণীর কামড়ের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কুমিরের যে এলাকায় থাকে, সেখানে যেকোনো প্রাণী ঢুকলে সে আক্রমণ করে।
কখনো কখনো কুমির শিকারের জন্য ওত পেতে থাকে। কুমিরের আক্রমণে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এক হাজার মানুষের প্রাণ যায়।
বিচ্ছু লেজের মাধ্যমে হুল ফোটায় এবং শিকারের শরীরে বিষ ঢেলে দেয়। বিশ্বে ২ হাজার ৬০০–এর বেশি প্রজাতির বিচ্ছু রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে মাত্র ২৫টি মধ্যে রয়েছে মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার মতো বিষ।
সবচেয়ে বিষাক্ত বিচ্ছুর বাস শুষ্ক ও মরু অঞ্চলে। সাধারণত শিশু–কিশোর ও শারীরিকভাবে সমস্যা আছে এমন মানুষ বিচ্ছুর বিষে মারা যায়। স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও মারা যেতে পারে, তবে তার সম্ভাবনা কম। প্রতি বছর বিচ্ছুর কারণে ৩ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়।
ঘাতক ক্ষুদ্র পতঙ্গগুলো প্রাণঘাতী চাগাস রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী। রক্ত চুষে নেওয়া এই শিকারি পতঙ্গগুলো মধ্য ও উত্তর আমেরিকার জন্য সত্যিকারের হুমকি হয়ে আছে।
চাগাস রোগ ঘাতক পতঙ্গগুলোর কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া এসব পতঙ্গের দ্বারা সংক্রমিত বা এর বিষ্ঠামিশ্রিত খাদ্য বা পানীয় খেলে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়। রোগটি মানুষের হৃৎপিণ্ড, পাচন ও স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত করে। প্রতিবছর চাগাস রোগে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
মানুষের বন্ধু কুকুর। তবে প্রাণীটি মানুষের সবচেয়ে শত্রু হয়ে ওঠে, যখন সেটি জলাতঙ্কের কারণ হয়। কুকুর তার প্রভুকে রক্ষায় অনাহুত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ করে। তাকে কামড়ে দেয়।
কুকুরের কামড়ে বা আঁচড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয়। চিকিৎসা না নিলে এতে মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর জলাতঙ্গ রোগে মৃত্যু হয় ৫৯ হাজার মানুষের।
বিশ্বজুড়েই বিষধর সাপ রয়েছে। সাপের কামড়ে যেমন মানুষের মৃত্যু হয়, আবার অন্যভাবেও মানুষের প্রাণ নিতে পারে।
ব্ল্যাক ম্যাম্বা নামের সাপের মাত্র দুই ফোঁটা বিষে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। অন্যদিকে অজগর মানুষকে আস্ত গিলে খেতে পারে। তবে অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ সাপের কামড়ে। প্রতিবছর বিশ্বে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সাপের বিষে।
এটা কিছুটা প্রতারণা বটে, তবে মানুষের মৃত্যুর প্রশ্নে মানুষই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভংয়কর প্রাণী। অবশ্য এটাকে নরহত্যা বলাই ভালো।
‘আওয়ারওয়ার্ল্ড ইনডেটা’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে যত মানুষের প্রাণ যায়, তার মধ্যে নরহত্যার ঘটনায় ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। প্রতিবছর হত্যাকাণ্ডে চার লাখ মানুষ প্রাণ যায়।
মশাই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী। ম্যালেরিয়ার মতো রোগ ছড়িয়ে এই পতঙ্গটি প্রতি বছর ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটায়। অবশ্য কেবল স্ত্রী মশাই কামড়ায়।
বিশেষ করে আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি খুবই খারাপ। অঞ্চলটিতে প্রতিবছর ম্যালেরিয়ায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, তা বিশ্বের মোট মৃত্যুর ৯৫ থেকে ৯৬ শতাংশ।