পাকিস্তানের শীর্ষ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ‘শক্ত পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি)। এই রাজনীতিকদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। টিটিপি বলছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা এই হুমকির কারণ।
টিটিপি পাকিস্তানি তালেবান নামেও পরিচিত। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবানের সঙ্গে তাদের আদর্শগত মিল রয়েছে। বুধবার টিটিপির মুখপাত্র মুহাম্মদ খোরাসানি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় হলো রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি টিটিপি। যদি দুই দল তাদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে দলগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
টিটিপি দুই দল বলতে বুঝিয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে (পিপিপি)। পিএমএল-এন ও পিপিপি পাকিস্তানে বর্তমান জোট সরকারের প্রধান দুটি দল। পিএমএল-এনের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ। আর পিপিপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিলাওয়াল।
দিন কয়েক আগেই পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) ঘোষণা দিয়েছিল, তারা পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। এরপরই টিটিপির কাছ থেকে হুমকির এই বার্তা এল। টিটিপি বলছে, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। তারা পশ্চিমাদের ইচ্ছায় দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে।’
২০২২ সাল জুড়ে পাকিস্তানে অন্তত ১৫০টি হামলা চালিয়েছে টিটিপি। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে গত নভেম্বরে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে করা একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি থেকে সরে আসে টিটিপি। আফগানিস্তান তালেবানের মধ্যস্থতায় ওই চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের পর টিটিপি যোদ্ধাদের আরও বেশি হামলা চালানোর আদেশ দেন গোষ্ঠীটির নেতারা।
পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করছে বলে বুধবার দেওয়া বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে টিটিপি। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ টিটিপির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার চেষ্টা করছেন। তবে সরকার কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কুমন্ত্রণার ফাঁদে পড়ল, তা টিটিপির কাছে স্পষ্ট নয়।
এদিকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে এনএসসির সিদ্ধান্তের সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকার বলছে, ‘সন্ত্রাসবাদ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার অধিকার আছে পাকিস্তানের। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, আফগানিস্তানের মাটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের জন্য ব্যবহার করা হবে না বলে তালেবান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা তাদের মেনে চলা উচিত।
নেড প্রাইসের ওই মন্তব্যের কারণ, পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ রয়েছে, আফগানিস্তানের মাটিতে তালেবান টিটিপি নেতাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে কাবুল। প্রাইস বলেন, ‘তালেবান এখন পর্যন্ত তাদের ওই প্রতিশ্রুতি ধরে রাখতে পারেনি।