বিক্ষোভে অবরুদ্ধ ইসলামাবাদ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি
রয়টার্স

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন তাঁর সমর্থক ও দলের কর্মীরা। মঙ্গলবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কাছের একটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) কর্মীরা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে দেশটির রাজধানী।

গত এপ্রিল মাসে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ইমরান খান দেশে সাধারণ নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। আগাম নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর লাহোর থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে লংমার্চ শুরু করেছিলেন ইমরান খান। এরপর গত বৃহস্পতিবার সেই লংমার্চ পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে পৌঁছালে ইমরানের ওপর হামলা হয়। এরপর লংমার্চ থেমে যায়। ইমরানের ডান পায়ে গুলি লেগেছে। লাহোরের শওকত খানুম হাসপাতাল থেকে গত রোববার বাসায় ফিরেছেন ইমরান খান। বাসায় ফিরেই আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ইমরান খান বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে লংমার্চ চলবে।

বিক্ষোভ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মানুষের কাজে যেতে সমস্যা হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে জ্যামে আটকে থাকতে হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা অ্যাম্বুলেন্সও যেতে দিচ্ছেন না।

পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পক্ষ থেকে আগাম নির্বাচনের দাবি প্রত্যাখ্যান করার পর দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ইমরান খানের সমর্থকেরা গত সোমবারও দেশটির প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক বন্ধ করে দেন। স্থানীয় টেলিভিশনগুলোতে ইমরানের সমর্থকদের টায়ার জ্বালাতে দেখা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল সব প্রদেশের স্কুলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। এর আগে পাঞ্জাব পুলিশ মামলা দায়েরে ব্যর্থ হলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর হুঁশিয়ারি দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

ডন–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাদেশিক পুলিশ অবশেষে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে মামলা নথিভুক্ত করেছে। আটক সন্দেহভাজন নাভিদকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনের ৭ নম্বর ধারাসহ পাকিস্তান দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় সোমবার উপপরিদর্শক আমির শাহজাদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান তাঁকে হত্যার কথিত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশের মামলায় তাঁদের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। হামলার ঘটনায় পিটিআই নেতা জুবাইর খান নিয়াজির এক মামলার আবেদনে জ্যেষ্ঠ সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের নাম ছিল। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

এর আগে দিনের শুরুতে এই মামলা গ্রহণে দেরির বিষয়টি ব্যতিক্রম হিসেবে আমলে নেন সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ফয়সাল শাহকার যদি স্বতঃপ্রণোদিত আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচতে চান, তাহলে তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন।

গত ২৫ মে প্রথম দফা লংমার্চে সহিংসতা এবং পিটিআই কর্তৃক আদালতে দেওয়া অঙ্গীকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অবমাননার মামলা চলাকালে সর্বোচ্চ আদালত এ মন্তব্য করেন। মামলা দায়েরের বিষয়টি ছাড়াও কয়েকটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন সুপ্রিম কোর্ট।

পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেন, ‘আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না, এটা একজন জাতীয় নেতাকে হত্যার চেষ্টা?’ একই সঙ্গে মামলা দায়ের এবং তদন্ত–পরবর্তী সময়ে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আগাম নির্বাচনের দাবিতে দ্বিতীয় দফা লংমার্চ চলাকালে বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন ইমরান খান, পিটিআইয়ের কয়েকজন নেতাসহ ১৪ জন।