পাকিস্তানে কয়েক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেটের গতি ভয়াবহ রকম ধীর। এ জন্য কে দায়ী বা কী কারণে এমনটা হচ্ছে, তা নিয়ে এখন জোর বিতর্ক চলছে।
সরকারবিরোধীরা বলছেন, পাকিস্তান সরকার এখন চীন সরকারের মতো ইন্টারনেটে ‘ফায়ারওয়াল’ তৈরি করতে চাইছে। উদ্দেশ্য অনলাইন জগতের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা। অবশ্য শাহবাজ শরিফ সরকার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। বরং বলেছে, ভিপিএনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এমনটা হচ্ছে।
‘ফায়ারওয়াল’ হলো একটি নেটওয়ার্ক নিরাপত্তাব্যবস্থা, যা পূর্বনির্ধারিত নিরাপত্তা নিয়মের ভিত্তিতে ইনকামিং ও আউটগোয়িং নেটওয়ার্কে ট্র্যাফিক নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে।
পাকিস্তানসহ এশিয়ার অনেক দেশে বিপ্লব, বিক্ষোভ ও জন–অসন্তোষ দমনের সময় প্রশাসন থেকে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া ঘটনা নিয়মিত ঘটতে দেখা যায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গ্রেপ্তার এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে গত বছর থেকেই পাকিস্তানে থেমে থেমে বিক্ষোভ হচ্ছে। তখন থেকেই সে দেশের সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে রেখেছে। বিক্ষোভ সড়ক থেকে ডিজিটাল জগতে ছড়িয়ে পড়ার পর ইন্টারনেটের গতিও ধীর করে দেওয়া হয়েছে।
‘জাতীয় নিরাপত্তার’ কথা বলে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সময় থেকেই মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ বন্ধ রাখা হয়েছে।
পাকিস্তানে, বিশেষ করে ইমরান খানের সমর্থকদের মধ্যে ‘এক্স’ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাকিস্তানিদের অন্যতম ইমরান খান, তাঁর অনুসারী প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ।
পাকিস্তানে ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় গতকাল রোববার দেশটির তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী শাজা ফাতিমা বলেন, বর্তমানে ইন্টারনেটে যে ধীরগতি, তার পেছনে সরকারের কোনো হাত নেই।
শাজা ফাতিমা ও তাঁর দল ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী ও টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মিলে এই সংকট নিরসনে ‘অক্লান্ত পরিশ্রম’ করে যাচ্ছেন।
শাজা ফাতিমা বলেন, জনগণের একটি ‘বড় অংশ’ ভিপিএন ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, এটি নেটওয়ার্কের ওপর চাপ তৈরি করেছে, যে কারণে ইন্টারনেটের গতি কমেছে।
ইন্টারনেটের গতি ধীর হওয়ার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে, এমন খবরকে শাজা ফাতিমা ‘সম্পূর্ণ ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বরং সরকার সাইবার নিরাপত্তা আরও উন্নত করতে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে বলেও জানান শাজা ফাতিমা।
শাজা ফাতিমা বলেন, এই দেশকে যে সাইবার নিরাপত্তা আক্রমণের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তা বিবেচনা করে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের অধিকার।
আর বিরোধীরা বলছেন, অন্য সব রাজনীতিবিদের মতো শাজা ফাতিমাও সমালোচনা এড়াতে চেষ্টা করছেন। তাই এসব বলছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর নজর রাখে, এমন স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শাহজাদ আহমদ এ বিষয়ে বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তানে ইন্টারনেট পরিষেবা যে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তার ‘যথেষ্ট প্রযুক্তিগত প্রমাণ’ তাঁর প্রতিষ্ঠানের হাতে আছে।
ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে পাকিস্তানে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের ব্যবসায়ী নেতারা।
এর ফলে দেশটির আইটি সেক্টর ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সফটওয়্যার হাউস অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলেছে, এটা এই সেক্টরের কার্যক্ষমতার ওপর একটি সরাসরি, বাস্তব ও আক্রমণাত্মক আক্রমণ।
অবিলম্বে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আইটি কোম্পানিগুলো যে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেটা আর আশঙ্কা থাকবে না, বরং আসন্ন বাস্তবে পরিণত হবে।
সমাজকর্মীরা এ বিষয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন। পিটিশনে তাঁরা ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া পাকিস্তানের সংবিধানের অধীন একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ করেছেন।