রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির তথ্য গোপন করায় পার্লামেন্ট সদস্য পদ খারিজ ও নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আজ শনিবার তাঁর পক্ষ থেকে এই আবেদন করা হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার ইমরানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।
হাইকোর্টে করা আবেদনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান উল্লেখ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন সিদ্ধান্ত জানানোর আইনগত এখতিয়ার ইসিপির নেই। তাই আদালতের কাছে তাঁর আবেদন, এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক।
আগামী সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে ইমরানের এ আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা।
গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বে ইসিপির পাঁচ সদস্যের প্যানেল ইমরানের বিরুদ্ধে রায় দেয়। ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বিদেশ থেকে পাওয়া উপহারের তথ্য গোপন করে আইনের লঙ্ঘন করেছেন। তিনি কিছু উপহার বিক্রিও করেছেন।
সংবিধানের যে ৬৩(১)(পি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তাতে তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন করতে পারবেন না। পাকিস্তানি আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইন অনুযায়ী তিনি পাঁচ বছর নির্বাচন করতে পারবেন না।
এর আগে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) মোহসিন নওয়াজ রানঝাসহ কয়েকজন রাজনীতিক মিলে ইমরানকে অযোগ্য ঘোষণার আবেদন করেছিলেন। তোশাখানা কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা এই আবেদন গত ২২ আগস্ট নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ।
অবশ্য ইমরান খানের আইনজীবী গোহার খান গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইসিপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই পার্লামেন্টের মেয়াদে কোনো নির্বাচন করতে পারবেন না ইমরান। তাই এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
তবে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আইনি লড়াইটা ইমরানের জন্য বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, ইসিপির পাঁচ সদস্যের প্যানেলের সবার সইসহ রায়ের চূড়ান্ত অনুলিপি পেতে বিলম্ব হতে পারে। এর ফলে ইমরানের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত আপিল করতেও দেরি হবে। এই সময়ক্ষেপণ ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর।
এই বিষয়ে পিটিআইয়ের আইনি পরামর্শক দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফয়সাল হুসেইন পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ইমরান খানের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইসিপি নিজের আইন লঙ্ঘন করেছে। তাই আমাদের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দলের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হবে। যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ বিষয়।’
ফয়সাল হুসেইনের অভিযোগ, এখন ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় বেশি। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে বড় জয় পেয়েছে পিটিআই। এটাই সরকারের ভয়ের কারণ। তাই বেআইনিভাবে ইমরান খানের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।