পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোরে আজ বৃহস্পতিবার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। দেশটির জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, বৃষ্টিতে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এই শহরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়েছে, এমনকি বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, তিন ঘণ্টায় শহরটিতে প্রায় ৩৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে। সেবার বৃষ্টি হয়েছিল ৩৩২ মিলিমিটার। অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফারুক দার এএফপিকে বলেন, ‘আজকের বৃষ্টি রেকর্ড ভাঙার।’
এই পরিস্থিতিতে শহর কমিশনার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি আজকের জন্য অফিস ও স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, তিন দিন ধরে দেশটির পাহাড়ি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশটিতে বৃষ্টিতে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আর স্থানীয় পুলিশ সূত্রে এএফপি জানিয়েছে, লাহোরে আজ সকালে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এর ফলে যানবাহন চলাচল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়াম শরিফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, পানি সরাতে সব যন্ত্রপাতি মাঠে নামানো হয়েছে।
ভারতের সীমান্তবর্তী দুটি সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি ঢুকে পড়েছে। এমনকি বিকেল পর্যন্ত সেখানে বিদ্যুৎবিভ্রাট ছিল। এদিকে প্রতিবেশী ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় রাজ্য কেরালায় বৃষ্টিতে ভূমিধসে অন্তত ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বার্ষিক বৃষ্টির প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এই গ্রীষ্মকালীন বর্ষায় (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) হয়ে থাকে। এটি কৃষির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু এই আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এখন মানুষের জীবন ও জীবিকা দুই-ই ঝুঁকির মুখে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। আবার ১৯৬১ সালের পর গত এপ্রিল ছিল সবচেয়ে বেশি বর্ষণমুখর। এপ্রিলে বজ্রপাত এবং ঝড়সংক্রান্ত অন্যান্য ঘটনায় অন্তত ১৪৩ জন নিহত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২২ সালে নজিরবিহীন বৃষ্টিতে পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েন। লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। এই ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ছিল তিন হাজার কোটি ডলার।