পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান বলেছেন, দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর ‘কোনো আলোচনা’ হয়নি। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
গত সপ্তাহে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর থেকে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছেন ইমরান। ওই সাক্ষাৎকারে দেশের জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছানোর বিষয়টি ফুটে ওঠে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তিন দশকের বেশি সময় দেশটি শাসন করেছে। এখনো পর্দার আড়ালে বাহিনীটি বেশ ক্ষমতা রাখে।
গতকাল বৃহস্পতিবার লাহোরে নিজ বাড়িতে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন, ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের সঙ্গে স্পষ্টতই আমার কিছু সমস্যা আছে। আমি জানি না ভবিষ্যতে কী হবে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।’
গত নভেম্বরে তাঁকে হত্যাচেষ্টার পেছনে একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছিলেন—এমন অভিযোগ করার কয়েক ঘণ্টা পরেই আদালত প্রাঙ্গণে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে ঘিরে ধরেন ও দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করে।
সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার আগামী সাধারণ নির্বাচনে পিটিআইয়ের মুখোমুখি হতে ‘ভয়’ পাচ্ছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যেই দেশটির নির্বাচন হওয়ার কথা।
পিটিআই প্রধান বলেন, ‘আমাদের দল এক বছর ধরে দমনপীড়নের শিকার হচ্ছে।’
ঐতিহাসিকভাবে ইসলামাবাদে স্থিতিশীল সরকারের ভিত্তি সামরিক সমর্থন। যদিও বাহিনীটি রাজনীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে। ইমরান খান বলেন, গত সপ্তাহের সহিংসতা ছিল পিটিআইয়ের ওপর দমনপীড়নকে ন্যায্যতা দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’।
অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ায় ৭ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছিল এবং অন্তত ১৯ জন ঊর্ধ্বতন পিটিআই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এমনকি সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের কারও কারও বাড়িতে রাতভর অভিযানও চালানো হয়েছিল।
তবে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ গত সপ্তাহে বলেছিলেন, এই সন্ত্রাসবাদ ও সংঘবদ্ধ হামলা সবই ইমরান খানের পূর্বপরিকল্পিত। সরকার সেনাবাহিনীর স্থাপনায় তাণ্ডব চালানো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সামরিক আদালতে বিচার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইমরান বলেন, ‘আমরা যখনই কথা বলছি, তারা আমাদের নেতা–কর্মীদের আরও বেশি করে তুলে নিয়ে জেলে পুরছে।’
ইমরান খানকে বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু এই বিশৃঙ্খলা–সম্পর্কিত। তাঁকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে এমনটা করা হচ্ছে বলে তাঁর দল মনে করছে।
ইমরান খান দাবি করেন, তাঁর দলের জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছে, তা বজায় থাকবে। এর ফলে একদিকে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে আরও উত্তেজনা বাড়বে এবং অন্যদিকে তাঁর আন্দোলন।
ইমরান খান বলেন, ‘নিষিদ্ধ ও অযোগ্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ধ্বংস করা যাবে না। যদি জনগণ আপনার সঙ্গে থাকে, তাহলে আপনাকে আর প্রার্থী বা নামের ওপর নির্ভর করতে হবে না।’
২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান। গত এপ্রিলে সংসদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা হারান তিনি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থায় নিয়োগ ও পররাষ্ট্রনীতির কারণে অনেককে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। এরপর অবশ্য তাঁর জায়গায় যে জোট সরকার এসেছে, তারা এখন দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির সঙ্গে লড়াই করছে। কিন্তু ক্যারিশম্যাটিক বিষয় হলো, ইমরান খানের প্রতি সমর্থন বাড়ছে।
গত নভেম্বরে পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে ইমরানের লংমার্চে গুলি চালিয়েছেন সন্ত্রাসীরা। এ হামলায় ইমরানের পায়ে বেশ কয়েকটি গুলি লাগে।
গত সপ্তাহে গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা আগেও ইমরান দাবি করেছিলেন, ওই হামলার ঘটনার পরিকল্পনা করেছিলেন শরিফ (নওয়াজ) ও শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির। তারপরও সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত। ইমরান বলেন, ‘বিশ্বাস করুন, আমার দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই। বিষয়টি হলো, কেউ নিজের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়তে চায় না।’