পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র এখন ‘সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে’ রয়েছে।
কয়েক দিন ধরে নানা নাটকীয়তার শেষে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর গতকাল শনিবার ভোরে সড়কপথে লাহোরের জামান পার্কের বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। এরপর আজ রোববার তিনি তাঁর গ্রেপ্তার ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে স্কাই নিউজের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন।
আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর তিনি শুধু বিচারব্যবস্থার প্রতি তাঁর আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগই এখন জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের ‘একমাত্র ভরসা’।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান। তিনি দেশটিতে মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি নজিরবিহীন অবস্থায় পৌঁছেছে।
পিটিআই চেয়ারম্যান কারা হেফাজতে নিজের অভিজ্ঞতা ও তাঁর বাসভবনে পুলিশের দুবারের অভিযান প্রসঙ্গেও কথা বলেন।
কারাগারের ভেতরে প্রথমবার তাঁকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখানো হয় বলে তিনি জানান। ইমরান বলেন, তাঁর বাড়িতে অভিযানের সময় স্ত্রী একা ছিলেন। কিন্তু তখন পুলিশ দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢোকে, যা তাঁর জন্য উদ্বেগজনক ও নজিরবিহীন পরিস্থিতি ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাকিস্তানের গণতন্ত্রের অবনতিশীল অবস্থার ওপর জোর দিয়ে ইমরান বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ১৫০টি মামলা দেওয়া হয়েছে, যা আগের কোনো রাজনীতিবিদের সঙ্গে হয়নি।
সরকার নির্বাচনকে ভয় পায় অভিযোগ করে ইমরান বলেন, তাঁর মতে, তারা (ক্ষমতাসীন জোট) বিশ্বাস করে, নির্বাচনে তারা গোহারা হারবে। তিনি বলেন, সরকার নির্বাচনকে নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। তারা নির্বাচনে পিটিআইয়ের কাছে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে।
রাজনৈতিক বৈরিতা কোনো পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা বোঝাতে ইমরান দাবি করেন, ক্ষমতাসীন জোট কেবল তখনই নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, যদি তাঁকে কারাগারে রাখা হয় বা হত্যা করা হয়।
দুবার তাঁকে হত্যা করতে গুপ্তহামলা চালানো হয়েছে উল্লেখ করে পিটিআইপ্রধান তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
৯ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁর দলের কর্মীদের বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা ইমরান তাৎক্ষণিকভাবে সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানান।
গ্রেপ্তারের ঘটনাটি মনে করে তিনি বলেন, সেই মুহূর্তটিতে তিনি দ্বিধান্বিত ছিলেন। ইমরান বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তারের সময় হঠাৎ কমান্ডোদের মতো কিছু লোক হাজির হন। আমি ভেবেছিলাম, তাঁরা আমার নিরাপত্তার জন্য এসেছে।’ কিন্তু দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে তাঁরা ধরতে এসেছেন।
ইমরান খান বলেন, তাঁর জীবন হুমকির মুখে থাকায় আগেই একজন বিচারক তাঁর সুরক্ষায় আদেশ জারি করেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার আকস্মিকতায় মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, ওই কক্ষে কিছু সন্ত্রাসী আছেন, যাঁদের লক্ষ্যবস্তু তিনি।
ইমরানকে গ্রেপ্তারে প্রত্যেকে যে নির্মম আচরণ করেছেন এবং ‘অবৈধভাবে’ গ্রেপ্তার করতে যে অতিরিক্ত বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনা তাঁর দীর্ঘদিন মনে থাকবে। তিনি বলেন, ‘তারা যেভাবে সবাইকে মারধর করেছে এবং আমাকে গ্রেপ্তার করেছে, তা অস্বস্তিকর ও মর্মান্তিক।’
বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ইমরান বলেন, তিনি আবারও কারাভোগের জন্য কতটা দৃঢ় ও প্রস্তুত আছেন, তা দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আবারও কারাগারে যেতে প্রস্তুত আছি।’