পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে বড় চমক দেখালেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান–সমর্থিত প্রার্থীরা। রাজনৈতিকভাবে দমন–পীড়নের মধ্যেও প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে আছেন তাঁরা। ফলে যেমনটি ধারণা করা হচ্ছিল, সেনাবাহিনীর ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল–এন) সহজেই সরকার গঠন করতে পারবে, তেমনটা হয়তো হচ্ছে না। হয়তো জোট সরকার হচ্ছে পাকিস্তানে। সেটি হলে দেশটিকে সামনের দিনগুলোতে আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
গত বৃহস্পতিবার নানা অভিযোগ, বিতর্ক ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনে (একটি স্থগিত) ভোট হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত হিসাবে কারাবন্দী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই)–সমর্থিত প্রার্থীসহ অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯৯টি আসন। পিএমএল–এন পেয়েছে ৭১টি আসন। আর বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩টি আসন। জাতীয় পরিষদে কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সরকার গঠনের জন্য অন্তত ১৩৪টি আসন পেতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে জোট সরকার গঠন করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে না সরকারের। এ নিয়ে ডন–এর এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, পাকিস্তান বর্তমানে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনের জন্য একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। এই সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শক্তিশালী জনসমর্থন থাকতে হবে। আর পাকিস্তান বর্তমানে আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। বিদেশি ঋণদাতা ও বিনিয়োগকারীরা যেন পাকিস্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিরাপদ অনুভব করেন, সে জন্য একটি স্থিতিশীল সামাজিক পরিস্থিতি প্রয়োজন হবে।
ডন–এর এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, পাকিস্তান বর্তমানে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনের জন্য একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন।
তবে পাকিস্তানে যে–ই সরকার গঠন করুক, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের কঠিন পরীক্ষার মুখেই পড়তে হবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক তারিক বানুরি আল–জাজিরাকে বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি ‘কাঠামোগত সমস্যায়’ দীর্ঘ সময় ধরে ভুগছে। দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ততটা বেশি নয়। কর সংগ্রহের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশগুলোর একটি পাকিস্তান। সরকারগুলো শক্তিশালী ব্যবসায়ীদের ভয়ে বড় ধরনের কর আরোপ করে না। তবে নতুন সরকারকে কর বাড়াতে হবে। সেটা করতে হবে ঋণ পরিস্থিতির কারণে।
পাকিস্তানের নির্বাচন ঘিরে এমন পরিস্থিতি তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে দায়ী করা হয়েছে ডন–এর সম্পাদকীয়তে। তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ‘পবিত্রতা’ নষ্টের জন্য এই পক্ষগুলো সমানভাবে দায়ী। তাদের পদক্ষেপ রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও সংকটের দিকে নিয়ে গেছে। এখনই এটা বোঝা যাচ্ছে যে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকটের নিরসন হবে না।
পাকিস্তানের অর্থনীতি ‘কাঠামোগত সমস্যায়’ দীর্ঘ সময় ধরে ভুগছে। দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ততটা বেশি নয়। কর সংগ্রহের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশগুলোর একটি পাকিস্তান। সরকারগুলো শক্তিশালী ব্যবসায়ীদের ভয়ে বড় ধরনের কর আরোপ করে না। তবে নতুন সরকারকে কর বাড়াতে হবে। সেটা করতে হবে ঋণ পরিস্থিতির কারণে।যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক তারিক বানুরি