ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানকে জোড়ার হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্তব্যের নিন্দা ইসলামাবাদের

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্তব্যের প্রতিবাদ করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশ্বশর্মার মন্তব্যকে ‘সম্প্রসারণবাদী’ মন্তব্য বলে চিহ্নিত করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় হিমন্ত বিশ্বশর্মা গত বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, বর্তমান সময়ে ভারতের সঙ্গে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে জোড়ার কাজ করতে পারে বিরোধী দল কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ১৫০ দিনের ‘ভারত জোড়ো’ শীর্ষক পদযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতেই এ মন্তব্য করেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। মন্তব্যটি নিয়ে উপমহাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ এখনো এ মন্তব্যের বিরোধিতা না করলেও গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো ওই মন্তব্যের সমালোচনা করে একটি বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাকিস্তান সুনির্দিষ্টভাবে জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতা এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীর হিন্দুত্ববাদভিত্তিক সম্প্রসারণবাদী ভাবনা, যা কথিত “অখণ্ড ভারতের” চিন্তা হিসেবে স্বীকৃত, তার বিরোধিতা করছে।’ বিবৃতিটি তাদের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তবে বিবৃতিতে ৭ সেপ্টেম্বর তারিখ দেওয়া আছে।

ইসলামাবাদ বলেছে, অযথা তৈরি করা এ ধারণা (পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে জোড়া সম্ভব) বিজেপির সংখ্যাগুরুবাদ ও হিন্দুত্ববাদের ভিত্তিতে নির্মিত। সংশোধন ও সম্প্রসারণবাদী এ ভাবনা প্রতিবেশী দেশের চরিত্র ও সংস্কৃতির পাশাপাশি নিজের দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে দমন করার একটা চেষ্টা। এটা ইতিহাস সম্পর্কে বিজেপির (ভারতীয় জনতা পার্টি) বিকৃত ও ভ্রান্ত চিন্তাকেই প্রকাশ্যে আনে।

বিজেপি নেতৃত্ব প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান সম্পর্কে ‘ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর’ চিন্তাভাবনা পোষণ করে বলে মন্তব্য করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারত তার দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি যে ধরনের দুর্ব্যবহার ও নিপীড়নের সাক্ষী রেখেছে, তা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পরিষ্কার। বিষয়টি থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই তারা এ ধরনের মন্তব্য করছে।’

এ প্রসঙ্গে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক আইন না মানার বিষয়টিকে উত্থাপন করে বিবৃতিতে ‘বেআইনিভাবে’ জম্মু-কাশ্মীরে সেনা মোতায়েনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের পাকিস্তানবিরোধী এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতেও পরামর্শ দিয়েছে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দিন কয়েক আগে ১৫০ দিনের ‘ভারত জোড়ো’ পদযাত্রা শুরু করেছেন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু থেকে। এ পদযাত্রার লক্ষ্য অর্থনৈতিক অসাম্য, সামাজিক মেরুকরণ এবং অত্যধিক রাজনৈতিককেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে জনমত গড়ে তোলা। এ প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে হিমন্ত বিশ্বশর্মা গতকাল বলেন, রাহুল গান্ধীর পরিবারই দেশ ভাগ করেছিল, অথচ এখন তিনিই আবার দেশ জোড়ার কথা বলছেন।

বিশ্বশর্মা বলেন, ‘১৯৪৭ সালে কংগ্রেসই ভারত ভেঙেছিল। তারাই ভারত থেকে পাকিস্তান গড়েছিল, যা থেকে পরে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। এখন রাহুল গান্ধী হয়তো ক্ষমা চাইতে চান, তিনি হয়তো বলতে চান যে আমার মাতামহ পণ্ডিত নেহরুর সময় যা হয়েছিল, তা হওয়া উচিত হয়নি। তাঁর মনে এ আফসোস যদি থাকে, তবে এর জন্য ভারতের ভূ-অঞ্চলকে নতুন করে জুড়তে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। ভারত বর্তমানে সংঘবদ্ধভাবেই আছে। আফসোস হয়ে থাকলে বরং তাঁর উচিত পাকিস্তানকে (ভারতের সঙ্গে) বা বাংলাদেশকে (ভারতের সঙ্গে) জোড়ার জন্য পরিশ্রম করা। তাঁর উচিত অখণ্ডিত ভারত তৈরি করার জন্য চেষ্টা করা।’

ভারতীয় পত্রপত্রিকায় বলা হয়েছে, বিশ্বশর্মার উদ্দেশ্য ছিল রাহুল গান্ধীকেই আক্রমণ করা। কিন্তু শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে এ মন্তব্য করায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার পর বিষয়টি একটা নতুন ও আন্তর্জাতিক মাত্রা পেল।