পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচনে দলটির জয়লাভের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। সেই জনপ্রিয়তায় ধস নামাতে তৎপর সরকার। কৌশলে এটা করতে সরকার পিটিআই নেতাদের নানাভাবে হেনস্তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সঙ্গে দলটির সম্পর্কে দেয়াল টানতেও সরকার কূটকৌশলে লিপ্ত বলে পিটিআইয়ের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন।
গত জুন মাসে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান ইমরান খান। এরপর ইমরান ও তাঁর দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ–নওয়াজের (পিএমএল-এন) ঘাঁটি পাঞ্জাব প্রদেশের উপনির্বাচন। পিএমএল–এনকে কোণঠাসা করে জয় পায় ইমরানের দল এবং রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠেন ইমরান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে পিটিআইয়ের যে জনপ্রিয়তা তাতেই শাসক দলের ভয়। কারণ, দলটির জনপ্রিয়তা অব্যাহত থাকলে আগামী সাধারণ নির্বাচনের বৈতরণী বেশ ভালোভাবে পেরিয়ে যাবেন ইমরান এবং আবার সরকার গঠনে সক্ষম হবেন তিনি। সেটা রুখতে সরকার পিটিআইকে বিভিন্নভাবে কাবু করার চেষ্টা করছে।
পিটিআই অবৈধ উৎস থেকে অর্থ নিয়েছে বলে ২ আগস্ট পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (পিইসি) রায় দেয়। পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আকবর এস বাবরের করা এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজা বলেন, পাকিস্তানের বিরোধী দল পিটিআই নিষিদ্ধ ঘোষিত উৎস থেকে তহবিল পেয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে পিটিআই আইনপ্রণেতা এবং নেতা–কর্মীরা নির্বাচন কমিশনের রায়কে অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক এবং পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে উল্লেখ করছেন। তাঁরা নির্বাচন কমিশন ও এর প্রধানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। অবিলম্বে সিইসি সুলতান রাজার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে পিটিআই।
নির্বাচন কমিশনের রায়ের পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ ইমরানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত নওয়াজ বর্তমানে লন্ডন রয়েছেন। ইমরানের দলকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান আমুন তারাক্কি পার্টির চেয়ারম্যান ফাইক শাহ। পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ইমরানের দলকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করারও দাবি তুলছে।
পাকিস্তানের জিও নিউজ জানায়, অবৈধ উৎস থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাতীয় পরিষদের সাবেক স্পিকার আসাদ কায়সার, ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরিসহ পিটিআইয়ের সামনের সারির বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে। তবে কাসিম সুরি বলেন, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এ ধরনের সমন অবৈধ ঘোষণা করায় তাঁরা কেউ এফআইএ দপ্তরে যাবেন না। ওই সমনের বিরুদ্ধে লাহোর হাইকোর্টে আবেদন করেছেন আসাদ কায়সার। তবে নির্বাচন কমিশনের রায়ের পর পিটিআইয়ের তহবিল গ্রহণের বিষয়ে গত বুধবার তদন্ত শুরু করে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ (এফআইএ)।
এফআইএর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পিটিআই সচিবালয়ে কর্মরত চার কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ও বেতনের অ্যাকাউন্টে বিদেশি তহবিল গ্রহণের বিষয়টি শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব কর্মকর্তা যে তহবিল পেতেন, তা ইমরান খানের দলের অর্থ ব্যবস্থাপকের হাতে তুলে দিতেন। এর আগে এ বিষয়ের তদন্ত করতে ছয় সদস্যের দল গঠন করেছে এফআইএ।
ইমরান খান দ্রুত নির্বাচনের দাবি করলেও ক্ষমতাসীন জোট আগামী বছরের আগে নির্বাচনে রাজি নয়। অনেকে বলছেন, নির্বাচনের দাবি যাতে চাপা পড়ে যায়, সেই লক্ষ্যেই সরকার পিটিআই নেতাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা শাহবাজ গিলকে গত মঙ্গলবার হেফাজতে নেয় পুলিশ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে ইমরান খান বলেন, গিলকে গ্রেপ্তার নয়, ‘অপহরণ’ করা হয়েছে।
ইমরান খান অভিযোগ করেন, তাঁর দলকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র করছে জোট সরকার। তিনি বলেন, সবকিছু করা হচ্ছে পিটিআইকে ভেঙে দিতে। কারণ, দেশে ঠিক এই মুহূর্তে কেন্দ্র এবং প্রাদেশিক উভয় পর্যায়ে পিটিআইয়ের সবচেয়ে বড় ভোটব্যাংক রয়েছে। এ জন্য তারা প্রথম কৌশল হিসেবে আপনাদের সামনে ‘বিদেশি তহবিল’ মামলাটি ব্যবহার করেছে। তবে সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পিটিআই সব অভিযোগকে মন গড়া কথা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আইন মেনে সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে সরকার।
ডন, জিও নিউজ ও রয়টার্স অবলম্বনে মো. মিন্টু হোসেন