পেট্রল ও ডিজেলের দাম আরও এক দফা বাড়িয়েছে পাকিস্তান সরকার। মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির ক্রমাগত দরপতন এবং ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের পাকিস্তান সফরের কয়েক দিন আগে দেশটিতে জ্বালানির দাম বাড়ানো হলো।
আজ রোববার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ঈশাক দার জ্বালানির নতুন দাম ঘোষণা করেছেন। এতে ডিজেল ও পেট্রলের দাম লিটারে ৩৫ রুপি বেড়েছে। পেট্রলের দাম এখন প্রতি লিটার ২৪৯ রুপি ও ডিজেল ২৬৩ রুপি। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার মাত্র ১০ মিনিট পরই বেলা ১১টা থেকে জ্বালানির নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
ঈশাক দার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং পাকিস্তানের রুপির ক্রমাগত দরপতনের বিষয়টি বিবেচনা করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হলো।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্তৃপক্ষের পরামর্শের পর সরকার দ্রুততার সঙ্গে তা বিবেচনা করে জ্বালানির দাম বাড়াল। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বলছে, বাজারে কৃত্রিম সংকট ও অবৈধভাবে মজুত করায় জ্বালানির দাম বেড়েছে। এসব মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক বিবেচনায় নতুন দাম নির্ধারিত হলো।
জ্বালানির নতুন এ দাম ঘোষণার আগে পাকিস্তানের পেট্রল ও ডিজেল স্টেশনগুলোতে জ্বালানি নেওয়ার জন্য গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পাকিস্তানে আরও এক দফা জ্বালানির দাম বাড়ানোর এ ঘোষণায় সরকারের সমালোচনা করছেন অনেকে। পাকিস্তানের ফেডারেল ব্যুরো অব রেভনিউয়ের সাবেক চেয়ারম্যান শাববার জাইদি জ্বালানির দাম বাড়ানোয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর টুইটারে তিনি লেখেন, ‘গরিব মানুষেরা কীভাবে বাঁচবেন? গরিব ও মধ্যবিত্তদের জীবনের সাধারণ একটি প্রশ্নেও এ জাতি কীভাবে এত উদাসীন থাকতে পারে?’
এদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির মান প্রতিনিয়ত কমে চলেছে। গত বৃহস্পতিবার এক ধাক্কায় রুপির মান ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কমার পর প্রতি ডলারের দাম ২৫৫ রুপিতে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, এ দরপতন গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এদিকে ডলারের সংকটে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধসহ বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রাখতে পারছে না পাকিস্তান। আর্থিক পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় আইএমএফ। গত বছর পাকিস্তানে বন্যার পর দেশটিকে সাহায্য করার জন্য আরও ১০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা জানায় সংস্থাটি। তবে আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে ব্যর্থ হওয়ায় গত নভেম্বরে সে অর্থ বিতরণ স্থগিত করে আইএমএফ।
এমন পরিস্থিতিতে ঋণ দেওয়ার জন্য পাকিস্তানে সরকারি ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে আইএমএফ। ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইএমএফের সেই শর্ত মেনেই সরকার জ্বালানির দাম আবার বাড়াল।