পাকিস্তানের রাজনীতিতে ফের নাটকীয়তা দেখা গেল। উপনির্বাচনের পর পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে জোটগতভাবে এগিয়ে ছিল ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। কিন্তু তাঁর শরিক দলের নেতারই এক চিঠির সূত্র ধরে টিকে গেছে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজের মুখ্যমন্ত্রীর পদ। খবর ডন ও জিও নিউজের।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মাজারি তিন ভোটে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এ) প্রার্থী হামজা শাহবাজকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তবে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই।
পুরো ঘটনাপ্রবাহকে ‘সার্কাস’ আখ্যা দিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান।
আদালতের নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রী পদে পুনরায় ভোট গ্রহণে গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় পরিষদের অধিবেশন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয় অধিবেশনের কার্যক্রম।
মুখ্যমন্ত্রী পদে জোটের শরিক পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদের (পিএমএল-কিউ) চৌধুরী পারভেজ এলাহিকে প্রার্থী করে পিটিআই। তিনি পান ১৮৬ ভোট। আর পিএমএল-এন প্রার্থী হামজা শাহবাজ পান ১৭৯ ভোট।
কিন্তু সংবিধানের ৬৩ (এ) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার পিএমএল-কিউ দলের ১০ সদস্যের ভোট বাতিল করে দেন। কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন, পিএমএল-কিউ প্রধান চৌধুরী সুজাত হোসেন কোনো দলের পক্ষে পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোট না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে এক চিঠিতে তাঁকে জানিয়েছেন। ফলে, তিন ভোটে হামজা শাহবাজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সংবিধানের ৬৩ (এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে দেওয়া কোনো পার্লামেন্ট সদস্যের ভোট গণনা করা হবে না। এমনকি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দিলে তাঁদের সদস্য পদও বাতিল বলে গণ্য হবে।
ডেপুটি স্পিকারে সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন পিটিআই নেতা রাজা বাশারাত। তিনি বলেন, পিএমএল-কিউয়ের সংসদীয় নেতা চৌধুরী সাজিদ। তাই এ ক্ষেত্রে সংবিধানের আর্টিকেল ৬৩ (এ) প্রযোজ্য হবে না। উল্লেখ্য, এই অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় ‘পার্লামেন্টারি পার্টির সিদ্ধান্তের’ কথা বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট।
বাশারাত বলেন, ‘সাজিদের নির্দেশনা অনুযায়ী পিএমএল-কিউ সদস্যদের সবাই এলাহিকে ভোট দিয়েছেন।’ ফলে, এখানে সুজাতের চিঠির কোনো ‘মূল্য নেই’ বলে তিনি জানান। ডেপুটি স্পিকারকে তিনি বলেন, ‘আপনি প্রার্থীকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন।
আপনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থীর নিজেরই ভোট দেওয়ারও সুযোগ নেই।’
যুক্তিতর্ক নিয়ে দুজনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি পিটিআই সদস্যরা ডেপুটি স্পিকারে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে অধিবেশন মুলতবি করে পিটিআই ও পিএমএল-কিউ-কে তাদের আপত্তি নিয়ে ‘আদালতের দ্বারস্থ হতে বলেন’ ডেপুটি স্পিকার।
ডেপুটি স্পিকারের ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির পরপরই পিটিআই নেতা আসাদ উমর টুইটে জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁর দল সুপ্রিম কোর্টে যাবে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে পিএমএল-এন প্রার্থী হামজা শাহবাজকে ভোট দেওয়ায় পিটিআইয়ের ২০ জনের আসন শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
গত রোববার এসব আসনের ভোটে ১৫টিতেই জয় পায় পিটিআই। ৪টি আসনে জয় পায় পিএমএল-এন। বাকি আসনটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। লাহোর হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে ভোটাভুটি হয়।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে পাঞ্জাব প্রদেশকে ‘নিয়ন্ত্রক’ মনে করা হয়। যারা পাঞ্জাব প্রদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকে বলে দেশটিতে প্রচলিত আছে। উপনির্বাচনের ধরাশায়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে ‘যে কোনো মূল্যে’ পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার পরামর্শ দেয় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন জোট।
এরই ধারাবাহিকতায় পাঞ্জাবে ইমরানের জোটের শরিক পিএমএল-কিউ প্রধান চৌধুরী সুজাতের সঙ্গে বৈঠক করেন শাহবাজের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা আসিফ আলি জারদারি। প্রথম দিকে জারদারির প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও শেষ মুহূর্তে ডেপুটি স্পিকারকে চিঠি দিয়ে নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন চৌধুরী সুজাত।