নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক ধরপাকড় আর অভিযানের মুখে বিক্ষোভ থেকে পিছু হটল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই)। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পিটিআইয়ের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ করতে ইসলামাবাদের ডি–চকে পৌঁছে যায়। তবে আজ ভোরে তিন দিন ধরে চলা বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে ইমরান খানের দল। দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের পুলিশ আজ জানায়, এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। তারা আদিয়ালা কারাগারে বন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের মুক্তির দাবিতে এ বিক্ষোভ করছিলেন। নিরাপত্তা রক্ষায় অভিযানের পর আজ ভোরেই সিটি সেন্টার থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে পিটিআই নিয়মিত বিক্ষোভ করে আসছে। গতকাল বিক্ষোভ ছিল তাদের সবচেয়ে বড়। এ বিক্ষোভ রাজধানী ইসলামাবাদ অচল হয়ে পড়ে।
পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকারের বর্বরতা এবং নিরস্ত্র নাগরিকদের জন্য রাজধানীকে কসাইখানায় পরিণত করার পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিচ্ছি।’
সাবেক ক্ষমতাসীন দলটি বলেছে, তারা দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের নির্দেশনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবে।
২৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে পিটিআইয়ের বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। দলটির এক মুখপাত্র বলেন, বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৭ জন নিহত হওয়ার বিস্তারিত তথ্য এসেছে। তাঁরা হলেন আনিস শেহজাদ সাত্তি, মালিক মুবিন আওরঙ্গজেব, আবদুল কাদির, মালিক সফদার আলী, আহমেদ ওয়ালি, মুহাম্মাদ ইলিয়াস ও আবদুল রশিদ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলটির রাজনৈতিক এবং প্রধান কমিটিগুলো বিক্ষোভ ও পরবর্তী সময়ে নাগরিকদের ওপর সরকারের বর্বরতার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করছে। পরে এসব বিশ্লেষণ ইমরান খানের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
প্রসঙ্গত, কারাবন্দী ইমরান খানের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ডি-চকে সমাবেশের ডাক দেয় পিটিআই। সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে অর্পণ করা হয়।
পিটিআইয়ের এই কর্মসূচিকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ অভিহিত করে দলীয় সব নেতা-কর্মীকে তাতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান ইমরান খান। কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত রোববার ইসলামাবাদ অভিমুখে গাড়িবহর নিয়ে যাত্রা শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। এই গাড়িবহরে ছিলেন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিও। এই সমাবেশ ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী ইসলামাবাদ। সমাবেশে যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পিটিআই নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের বাইরে ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে জড়ো হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। বিক্ষোভকারীরা লাঠি ও ইটপাটকেল মেরে এর জবাব দেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি এক বিবৃতিতে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে বিক্ষোভ মোকাবিলা করেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইমরান খান কারাগার থেকে আরও লোকজনকে বিক্ষোভে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি তাদের শান্তিপূর্ণ এ ঐক্যবদ্ধ থেকে দাবি আদায় করতে আহ্বান জানান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ বিক্ষোভকে চরমপন্থা বলে মন্তব্য করেন। গত রোববার থেকে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের কোনো ক্ষমা করা হবে না বলে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তবে পিটিআই সদস্যরা পিছু হটলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের ওপর দ্রুত রাজনৈতিক সংলাপের জন্য চাপ বাড়ছে।
পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিটিআই ও প্রধানমন্ত্রীর দলকে দ্রুত রাজনৈতিক সংলাপে বসা উচিত। উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, এ বিক্ষোভের কেউ বিজয়ী নন। বিক্ষোভ দমনের কারণে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। একই সঙ্গে পিটিআই সদস্যদেরও এ মূল্য গুনতে হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বিক্ষোভ দমনে সরকারি কর্মকর্তারা বেআইনি ও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন ও ট্রাম্প প্রশাসনের আইনপ্রণেতারা দ্রুত ইমরান খানের মুক্তি ও আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন।