পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিকে মূল অভিযুক্ত দেখিয়ে কূটনৈতিক তারাবার্তা ফাঁস মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনে গত শনিবার একটি বিশেষ আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফআইএ) এ অভিযোগপত্র জমা দেয়।
অভিযোগপত্রে সাবেক মুখ্যসচিব আজম খান ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসাদ উমরের নামও রয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে বিচারের জন্য শুধু ইমরান খান ও কুরেশির নাম জমা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনের ৫ ও ৯ ধারায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে এফআইএ। ফলে দোষী সাব্যস্ত হলে মৃত্যুদণ্ড কিংবা দুজনের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড হতে পারে।
অভিযোগপত্রে ২৭ জন সাক্ষীর কথা জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা। তবে সূত্রগুলো বলছে, তাদের মধ্য থেকে ১২ জনকে শুনানিতে হাজির করা হতে পারে।
সবচেয়ে আলোচিত সাক্ষী আজম খান ইতিমধ্যে ইমরান খানের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজম খান প্রায় এক মাস নিখোঁজ থাকার পর তাঁর জবানবন্দি প্রকাশ্যে আসে।
জবানবন্দিতে আরও বলা হয়, ইমরান খান কূটনৈতিক তারবার্তা জনসমক্ষে প্রদর্শন করবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের নিয়ে একটি বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমনটি সামনে এনে সুবিধা নেবেন বলে আজম খানকে বলেছিলেন।
এ ছাড়া জবানবন্দিতে বলা হয়, কূটনৈতিক তারবার্তাটি ইমরান খানের হাতে তুলে দেন আজম খান। পরে তারবার্তাটি কোথায় রেখেছেন, ভুলে গেছেন বলে ইমরান খান তাঁকে জানান এবং বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও সেটা আর ফেরত দেননি।
তারবার্তা মামলায় জামিন চেয়ে কারাবন্দী ইমরান খান আবেদন করার পর অভিযোগপত্র জমা দেয় এফআইএ। জামিন শুনানিতে অভিযোগপত্র জমা না দেওয়ার বিষয়টিও সামনে আনেন তাঁর আইনজীবীরা।
দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান ও ভাইস চেয়ারম্যান কুরেশির বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। একই সঙ্গে জনগণের সামনে সত্য তুলে ধরার জন্য তারবার্তা ষড়যন্ত্র তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে দলটি।
পিটিআইয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ভুয়া ও মিথ্যা তারবার্তা মামলায় দলের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র ‘ভিত্তিহীন ও অর্থহীন’। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, ওই তারবার্তা পররাষ্ট্র দপ্তরে অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন। একটি কূটনৈতিক তারবার্তার বরাতে তিনি তখন দাবি করেছিলেন, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র করেছিল।
তারাবার্তা ফাঁস মামলায় জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান খান তারবার্তাটি নিজের কাছে রাখার কথা স্বীকার করেন। তবে তারবার্তাটি ঠিক কোথায় রেখেছেন, তা মনে করতে পারছেন না বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান তিনি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট ওয়াশিংটনে নিযুক্ত তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর মধ্যকার ওই কথোপকথনের বিস্তারিত প্রকাশ করে। গত বছরের ৭ মার্চের ওই কথোপকথনে ইমরানের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে লন্ডন থেকে ২১ অক্টোবর দেশে ফিরছেন নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। দেশে ফিরে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সর্বোচ্চ নেতা। দলের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে গত শনিবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আগের দিন পিএমএল-এনের জ্যেষ্ঠ নেতা ইসহাক দার ঘোষণা দেন, নওয়াজকে ক্ষমতাচ্যুত করার নেপথ্যে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি আর তাঁরা করবেন না। পরে লাহোরে পৃথক বৈঠকেও একই মনোভাবের কথা জানান পিএমএল-এনের সভাপতি শাহবাজ শরিফ ও মুখ্য সংগঠক মরিয়াম নওয়াজ।