জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল শনিবার পাকিস্তানের বন্যাকবলিত সিন্ধু প্রদেশ পরিদর্শন করেছেন। তিনি পাকিস্তানকে সহায়তা দেওয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত পাকিস্তান পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সংস্থা যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো। খবর জিও নিউজের।
বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ তলিয়ে গেছে। প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ মারা গেছে। দেশটির শস্য এলাকা, ঘরবাড়ি, ব্যবসাকেন্দ্র, রাস্তাঘাট, সেতু—সবই বিধ্বস্ত হয়েছে বন্যায়।
গুতেরেস বলেন, বন্যাবিধ্বস্ত পাকিস্তান পুনর্গঠনে কমপক্ষে এক হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তাঁর সফরে পাকিস্তানে সহযোগিতা বাড়বে।
সিন্ধু প্রদেশের সাক্কুর শহরে দায়িত্বরত সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পাকিস্তানের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘ পাকিস্তানে যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতা ও সম্পদ সীমিত। তবে আমরা পাকিস্তানের জনগণের পাশে আছি।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি এখনই পাকিস্তানে সহায়তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাবেন।
বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে পাকিস্তানে এ বছর ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে এ রকম ভয়াবহ বন্যা দেখা যায়নি। দেশটির কৃষি ও পানি সরবরাহব্যবস্থার ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।
পাকিস্তানে এত বন্যা ও প্রাণহানির জন্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণকে দায়ী করেছেন গুতেরেস। গ্রিনহাউস গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝতে হবে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহের সঙ্গে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, ‘আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এখন প্রকৃতিও পাল্টা প্রতিশোধ নিচ্ছে। এসব কারণে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, তিনি বিশ্বে অনেক মানবিক বিপর্যয় দেখেছেন। তবে এ পর্যায়ের জলবায়ু বিপর্যয় দেখেননি। সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনের পর তিনি বলেন, ‘যা দেখেছি, তা বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার নেই।’
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাকিস্তান জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার পরিকল্পনা করেছে।
গুতেরেস বলেন, ‘ইসলামাবাদ থেকে আমি বিশ্ববাসীর উদ্দেশে একটি আবেদন জানাতে চাই, আর তা হলো প্রকৃতির সঙ্গে পাগলামি বন্ধ করুন। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ান।’
বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১ শতাংশেরও কমের জন্য দায়ী পাকিস্তান। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে দেশটি।
গুতেরেস পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকায় সফর করেছেন। তিনি সিন্ধু প্রদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মহেঞ্জোদারোতেও যাবেন।
পাকিস্তানে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ ঘরবাড়ি ও ব্যবসাকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭ হাজার কিলোমিটার রাস্তা প্লাবিত হয়েছে। ৫০০ সেতু ধ্বংস হয়েছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত বছর স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানে।
আশ্রয়শিবিরগুলোয় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু ও চর্মরোগ বেড়েছে।