নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক আর প্রেসিডেন্টের আহ্বান ছাড়াই পাকিস্তানের নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসতে হবে।
পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। সেই অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন বসার সর্বশেষ সময়সীমা আগামীকাল ২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির অপারগতা জানানোয় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ অধিবেশন ডাকার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতে নির্বাচিত সব এমপি শপথ নেবেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট ৩৩৬টি আসন রয়েছেন। এর মধ্যে ৭০টি আসন সংরক্ষিত। ৬০টি নারীদের জন্য। বাকি ১০টি সংখ্যালঘুদের।
উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতে নির্বাচিত সব পার্লামেন্ট সদস্য শপথ নেবেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট ৩৩৬টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি আসন সংরক্ষিত। ৬০টি নারীদের এবং ১০টি সংখ্যালঘুদের জন্য।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ইতিমধ্যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৬০টি আসনের মধ্যে বিভিন্ন দলকে ৪০টি আসন বরাদ্দ দিয়েছে। পাঞ্জাবে ৩২টির মধ্যে ২০টি, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ১০টির মধ্যে দুটি, সিন্ধুতে ১৪টির সব কটি এবং বেলুচিস্তানের চারটি আসনই বরাদ্দ হয়েছে।
এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি আসনের ৭টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইসিপি এখনো সংরক্ষিত আসন থেকে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলকে (এসআইসি) বরাদ্দ দেয়নি। এসআইসি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সঙ্গে জোট গড়েছে।
আসুন দেখে নিই, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে আর গুরুত্বপূর্ণ কী কী ঘটতে পারে—
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ। কেননা, নতুন স্পিকার নির্বাচনের আগপর্যন্ত সাংবিধানিকভাবে এ দায়িত্ব তাঁর।
পাকিস্তানের সংবিধানে বলা আছে, সাধারণ নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনে নবনির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ পড়ানো হবে। এরপর হবে নতুন স্পিকার নির্বাচন এবং সেটা গোপন ব্যালটে হতে হবে।
সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, বর্তমান স্পিকার এবারের নির্বাচনে জিতে আসা পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ পড়াবেন। এরপর তাঁরা নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী রেজিস্ট্রারে সই করবেন।
সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়া ও সই করা হয়ে গেলে বর্তমান স্পিকার নতুন একজন স্পিকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। সাধারণত উদ্বোধনী অধিবেশনের দিনই নতুন স্পিকার নির্বাচন হবে। পার্লামেন্ট সদস্যদের থেকেই দলগুলো স্পিকার পদে মনোনয়ন দেবে।
পাকিস্তানের সংবিধানের ৯১(৩) ধারায় বলা আছে, নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের সদস্যরা শপথ নেওয়া এমপিদের মধ্য থেকে একজন মুসলিমকে সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করবেন। এর আগে জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
সংবিধান মেনে গোপন ব্যালটে স্পিকার নির্বাচন হবে। ভোট দেবেন নতুন নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যরা। জয়ী ব্যক্তি স্পিকারের আসনে বসবেন। আর কোনো কারণে প্রাপ্ত ভোট সমান হলে, আবার নির্বাচন করতে হবে।
স্পিকার নির্বাচন হয়ে গেলে নতুন স্পিকার একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের জন্য তফসিল দেবেন। স্পিকার নির্বাচনের মতো একই প্রক্রিয়া মেনে গোপন ব্যালটে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে।
নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন হয়ে গেলেও পুরোনো স্পিকারের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। একই সঙ্গে নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন জাতীয় পরিষদের নেতা। সাধারণত জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন যেদিন বসে, তার পরদিন কিংবা এক দিন পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তানের সংবিধানের ৯১(৩) ধারায় বলা আছে, নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের সদস্যরা শপথ নেওয়া পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করবেন।
এর আগে জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
সংবিধান অনুযায়ী, পাকিস্তানের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার কিংবা বিরোধী দলের নেতা হতে ধর্মীয় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে দেশের প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই একজন মুসলিম হবেন, এমনটাই বলা আছে পাকিস্তানের সংবিধানে।
স্পিকারের তত্ত্বাবধানে উন্মুক্ত ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে। নিয়ম হলো, নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরুর মিনিট পাঁচেক আগে স্পিকার একটি ঘণ্টা বাজাবেন। এরপর সদস্যদের অধিবেশন কক্ষে জড়ো হতে হবে। এরপর কক্ষের দরজা লাগিয়ে দেওয়া হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হওয়ার আগপর্যন্ত দরজা খোলা হবে না। এ সময় কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতেও দেওয়া হবে না।
একাধিক প্রার্থী থাকলে স্পিকার পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রার্থীর ক্রম অনুযায়ী (এ, বি কিংবা সি) লবিতে যাওয়ার আহ্বান জানাবেন। এভাবেই ভোট নেওয়া হবে। দর্শক গ্যালারিতে বসে আমন্ত্রিতদের পুরো প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ রয়েছে।
কোনো রাজনৈতিক দলের পার্লামেন্ট সদস্য নিজ দলের প্রার্থীকে যদি ভোট না দেন, তাহলে তাঁর ভোট বাতিল হবে। তিনি শাস্তি পাবেন, তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে বলেও জানান আইনজীবী উসামা খাওয়ার।
সংবিধানে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী হতে হলে কোনো প্রার্থীকে ৩৩৬ পার্লামেন্ট সদস্যের মধ্যে ১৬৯ জনের ভোট পেতে হবে।
যদি প্রধানমন্ত্রী পদে দুইয়ের অধিক প্রার্থী থাকেন এবং কোনো প্রার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠতা (১৬৯ ভোট) পেতে ব্যর্থ হন; তবে আবারও ভোট নেওয়া হবে। প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুজন পরবর্তী দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যিনি ৫১ শতাংশ ভোট পাবেন, তিনি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর স্পিকার জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলের সদস্যদের কাছে তাঁদের নেতার পদে সম্ভাব্য প্রার্থীর মনোনয়ন চাইবেন। বিরোধী পার্লামেন্ট সদস্যরা তাঁদের সইসহ সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম জমা দেবেন।
নিয়ম হলো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর স্পিকার জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে প্রার্থীদের নাম জমা দেওয়ার তারিখ, সময় ও জায়গা জানিয়ে দেবেন। সম্ভাব্য নেতার নামের সঙ্গে বিরোধী সদস্যদের সই জমা দিতে হবে। এরপর স্পিকার সইসাবুদ যাচাই করবেন। তারপর সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাওয়া প্রার্থীকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ঘোষণা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পরপরই এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে। কিন্তু তালিকা জমা দেওয়া কিংবা পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। বিরোধী দলের নেতা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।
ওপরে উল্লেখ করা প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের ভোটও গণনা করা হবে।