জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির কথা স্বীকার করে শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার পদত্যাগের পর পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। ওই কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এদিকে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও সরকার গঠন নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটেনি দেশটিতে।
ভোট কারচুপির সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়ে গত শনিবার পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা। নির্বাচনে কারচুপির জন্য নিজের বিচার চান তিনি।
পরে পুলিশ ওই কর্মকর্তার দপ্তর সিলগালা করে দিয়েছে। তবে স্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কোনো মামলা না হওয়ায় লিয়াকতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তাঁকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনের দায়িত্বে নিযুক্ত কর্মী ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট উপকরণ ও নথিগুলো নিরাপদে রাখা হয়েছে।
লিয়াকত আলী এমন সময় কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন, যখন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফসহ (পিটিআই) কয়েকটি দল দেশজুড়ে ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ শুরু করেছে। এর মধ্যে গত শনিবার বিক্ষোভের সময় কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নেন পিটিআই নেতা-কর্মীরা।
ভোট কারচুপি নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি কমিশনারের অভিযোগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান গহর আলী খান। গতকাল রোববার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কমিশনার লিয়াকতের বক্তব্য নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে পিটিআইয়ের অবস্থান যে সঠিক, সেটাই তুলে ধরেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত দাবি করেছিলেন, রাওয়ালপিন্ডিতে ১৩ জন প্রার্থীকে জোর করে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন, এমন প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করেছি।’
পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করছি না। তবে কমিশনারের অভিযোগের বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত হতে হবে।’
যথাযথ আইনি ফোরামে নির্বাচনে কারচুপি–সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিলের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও। সিন্ধু প্রাদেশিক নির্বাচনে জয় উদ্যাপনে গতকাল আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেন, যদি সংশ্লিষ্ট ফোরাম ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাঁরা গণমানুষের সঙ্গে বিক্ষোভে নামবেন।
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘কলুষিত ও কুখ্যাত’ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াত-ই-ইসলামি পাকিস্তানের আমির সিরাজুল হক। গতকাল লাহোরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনে দল খারাপ ফলাফল করায় পদত্যাগ করবেন বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনের আগে করা জনশুমারির ফল প্রভাবিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সিরাজুল হক। তিনি বলেন, কিছু এলাকায় জনসংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে আর অন্য এলাকাগুলোতে কম দেখানো হয়।
জামায়াতের আমির বলেন, জালিয়াতির নির্বাচন ব্যবহার করে গঠিত সরকার এবং এ নির্বাচনের ফল বেশি দিন টিকবে না। সংবিধান ও আইন মেনে নেওয়ার বাইরে কোনো সমাধান নেই।
এ ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাসী সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিরাজুল হক। তিনি বলেন, প্রত্যেকেই এ বিষয়ে কথা বলছেন। কেবল সুবিধাভোগীরা চুপচাপ বসে আছেন।
পিটিআই নেতা ওমর আইয়ুব খান গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাকিস্তানের তিন কোটি মানুষ ইমরান খানকে ভোট দিয়েছেন। তাঁরা ইমরানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তাই কেন্দ্র ও প্রদেশগুলোতে সরকার গঠন করবে পিটিআই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে গতকাল পিটিআই নেত্রী মেহের বানু কুরেশি বলেছেন, ৮ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে জনগণের দেওয়া রায় চুরি হয়েছে। এখন সে জনরায় ফিরিয়ে এনে পিটিআই সরকার গঠনে আগ্রহী ও প্রস্তুত।
নির্বাচনে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অধিকাংশ আসনে জিতলেও সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) জোট সরকার গঠনে তৃতীয় স্থানে থাকা পিপিপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। নানা বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দর–কষাকষি চলছে। ফলে সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।