আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলা কী, ইমরান খানের গ্রেপ্তার কি বৈধ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ফাইল ছবি: এএফপি

আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়।

পৃথক মামলার শুনানিতে অংশ নিতে রাজধানী ইসলামাবাদের হাইকোর্টে গিয়েছিলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান। হাইকোর্ট চত্বর থেকে তাঁকে আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সহায়তায় গ্রেপ্তার করে দেশটির ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)।

আল-কাদির ট্রাস্টের নেতৃত্বে আছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। এনএবি গতকাল এক বিবৃতিতে বলে, ট্রাস্টে ‘দুর্নীতির অপরাধে’ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তারা গ্রেপ্তার করেছে।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহও নিশ্চিত করেন যে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা এনএবির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআইপ্রধানকে।

রানা সানাউল্লাহ বলেন, মামলায় এনএবি একাধিকবার নোটিশ দেওয়ার পরও ইমরান হাজির হননি। তাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ক্ষতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবি অস্বীকার করেছেন পিটিআই নেতারা। তাঁরা বলেছেন, এই মামলায় গতকালের আগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি।

ইসলামাবাদের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা আকবর নাসির খান আল–জাজিরাকে বলেন, ১ মে এই মামলায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল এনএবি।

গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হয় ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকার। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে।

৭০ বছর বয়সী ইমরান খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। অভিযোগগুলোকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন। তিনি বলে আসছেন, তাঁকে হটাতে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দল যোগ দিয়েছিল। এমনকি তিনি তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছিলেন। তবে পরে তিনি এই অভিযোগ থেকে সরে আসেন।

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলা কী

ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানে নতুন জোট সরকার গঠিত হয়। এই সরকার গত বছরের জুনে অভিযোগ করে, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের ট্রাস্টের জন্য পাকিস্তানের অন্যতম আবাসন ব্যবসায়ী মালিক রিয়াজের কাছ থেকে কোটি কোটি রুপি মূল্যের জমি পেয়েছেন।

এনএবির অভিযোগ, ইমরান খানের পিটিআই সরকার আবাসন ব্যবসায়ী মালিক রিয়াজের সঙ্গে একটি চুক্তি করে, যাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ২৩৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। চুক্তিটি ছিল ‘দেওয়া-নেওয়া’ ধরনের।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কালোটাকা-সম্পর্কিত এক তদন্তের জেরে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কাছে ২৩৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ হস্তান্তর করতে রাজি হন। যুক্তরাজ্যের এই মামলার সঙ্গে ইমরান খান ও তাঁর সরকার সরাসরি জড়িত ছিল না।

‘আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি’

গত বছর এনএবির আইনে পরিবর্তন আনা হয়। এ কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের লাহোরভিত্তিক আইনজীবী আবুজার সালমান নিয়াজি আল-জাজিরা বলেন, ইমরান খানের গ্রেপ্তার বেআইনি বলে তাঁর মনে হয়।

সালমান নিয়াজির মতে, এনএবির আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, সে অনুযায়ী, অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দিতে হবে। যদি ব্যক্তি এনএবিকে সহযোগিতায় বারবার ব্যর্থ হন, ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেপ্তার এড়াতে চেষ্টা করেন, তাহলেই শুধু পরোয়ানা জারি করা যেতে পারে।

আইনজীবী সালমান নিয়াজি বলেন, আইন সংশোধনের আগে এনএবির চেয়ারম্যানের যেকোনো অভিযোগ ওঠা ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির লাগামহীন ক্ষমতা ছিল। কিন্তু আইন পরিবর্তনের পর তার সুযোগ নেই।

এনএবির সাবেক প্রসিকিউটর ইমরান শফিক বলেন, অভিযোগ ওঠা ব্যক্তির বারবার গরহাজিরার ক্ষেত্রে তাঁকে গ্রেপ্তারের অধিকার এনএবির আছে। তবে ইমরান খানকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো, সেটিকে দুর্বল মনে হচ্ছে।

ইসলামাবাদভিত্তিক আইনজীবী ইমরান শফিক আল-জাজিরাকে বলেন, এনএবি বলেছে, তারা ইমরান খানকে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু এই নোটিশের প্রতি ইমরান খান কর্ণপাত করেননি। তবে এনএবির যে সংশোধিত আইন, সে অনুসারে, কর্তৃপক্ষকে প্রথমে অভিযোগের তদন্ত শেষ করতে হবে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁকে সেই তদন্তের প্রতিবেদন দিতে হবে।

ইমরান শফিক বলেন, নতুন আইন জামিন পাওয়ার বিষয়টিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। ফলে তা ইমরান খানকে সহায়তা করতে পারে।

লাহোরভিত্তিক আইনজীবী আসাদ রহিম খান বলেন, ইমরান খানের গ্রেপ্তারের সঙ্গে আইনের কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে যা আছে, তা হলো ভয়ভীতি ও দমনপীড়ন।