নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (ডানে)
নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (ডানে)

পাকিস্তানে জোট সরকারে কোন দল কোন পদ পেতে পারে

কেন্দ্রে একটি টেকসই জোট সরকার গঠনে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে প্রাথমিক একটি কৌশল (ফর্মুলা) বানিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন। এই কৌশল ধরেই আগামী দিনের সম্ভাব্য মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় দলটি।

পিএমএল-এন সূত্রে জানা গেছে, যদি পিপিপিসহ মিত্ররা প্রধানমন্ত্রীর পদ পিএমএল-এনের জন্য ছেড়ে দিতে রাজি হয়, তাহলে দেশের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের স্পিকারের পদ পিপিপিকে দেওয়া হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে ওই সূত্র।

একইভাবে ডেপুটি স্পিকারের পদ দেওয়া হতে পারে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানকে (এমকিউএম-পি)। কিংবা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে জিতে আসা কোনো প্রভাবশালী প্রার্থী জোট সরকারে এলে, তাঁকেও ডেপুটি স্পিকার করা হতে পারে।

এর পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পিএমএল-এন নিজেদের হাতে রাখতে পারে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে মিত্রদের মধ্যে বণ্টন করার সুযোগ রাখতে চায় পিএমএল-এন। এমনটাই বলা হয়েছে দলটির ঠিক করা প্রাথমিক কৌশলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, সিনেটের চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদে কে বসবেন, সেটা সিনেট নির্বাচনের পরে সম্ভাব্য জোট সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করতে চায় নওয়াজের দল।

সম্ভাব্য রাজনৈতিক শরিকদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে প্রাথমিক এই কৌশল তুলে ধরবে পিএমএল-এন। তবে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দলটি কৌশলে পরিবর্তন আনতে পারে বলেও ওই সূত্র জানিয়েছে।

পিএমএল-এনের নেতা নওয়াজ শরিফ, শাহবাজ শরিফ, পিপিপির নেতা আসিফ আলী জারদারি, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, এমকিউএম-পির নেতা খালিদ মকবুল সিদ্দিকি, জামায়াতে উলেমা-ই ইসলামের (জেইউআই) নেতা মওলানা ফজলুর রহমান, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদে আজমের (পিএমএল-কিউ) নেতা সুজাত হুসাইন এবং অন্য প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির মূল আলোচনা হতে পারে।

ইতিমধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। বৈঠক করেছেন পিএমএল-এন ও পিপিপির নেতারা। জানা গেছে, জোট সরকার গড়তে দল দুটির প্রাথমিক মতৈক্য হয়েছে।পিএমএল-এনের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, নওয়াজের দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে পিপিপি, এমকিউএম-পি, জেইউআইয়ের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। জোট সরকার গড়তে প্রাথমিক কৌশল নিয়ে আলোচনা চলছে।

সূত্র বলছে, এসব আলোচনায় পরবর্তী জোট সরকারের প্রধান হিসেবে পিএমএল-এনের পক্ষ থেকে নওয়াজ শরিফের নাম সামনে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্য শরিকদের মত জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে জোটভুক্ত হতে ইচ্ছুক কয়েকটি দল পিএমএল-এন থেকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে শাহবাজ শরিফের পক্ষে।

যদিও নওয়াজ কিংবা শাহবাজ নন, বরং পরবর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে দেখতে আগ্রহী পিপিপি। দলটি এ বিষয়ে ছাড় দিতে নারাজ। পিপিপির শীর্ষ নেতৃত্ব চায়, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে পিএমএল-এন আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিলাওয়ালকেই সমর্থন করুক।

পিএমএল-এনের সূত্রটি জানিয়েছে, ক্ষমতা ভাগাভাগির কৌশল নির্ধারণে সব দলের সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিটি করার চেষ্টা করছেন নওয়াজ-শাহবাজ। জোট সরকারের কাঠামো কেমন হবে, সেটা নির্ধারণ করবে এই কমিটি।

অন্যদিকে পিপিপি-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো ও কো-চেয়ারম্যান আসিফ জারদারি জোট সরকারে থাকার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে পিএমএল-এনের পক্ষ থেকে পাওয়া প্রস্তাব নিয়ে পিপিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির (সিইসি) বৈঠকে আলোচনা করা হবে। আজ সোমবার এ বৈঠক হওয়ার কথা।

এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে জিতে আসা রাজনীতিকদেরও দলে টানার চেষ্টা করছে পিএমএল-এন। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নওয়াজের দলে ভিড়েছেন। আরও কয়েকজন আসতে পারেন। এখন স্বতন্ত্রদের দলে টানার একই উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে পিপিপিও।

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির বাসভবনে পিএমএল-এন ও পিপিপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানের লাহোরে

অন্যদিকে জোট সরকারে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়ে এখনো কিছু জানাননি এমকিউএম-পি ও জেইউআইয়ের নেতারা। নিজ দলের সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এমকিউএম-পি। আর জেইউআইয়ের নেতা মওলানা ফজলুর রহমান বিষয়টি নিয়ে সমমনা অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন বলে দলসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।