পাকিস্তানে আরবি ক্যালিগ্রাফি (অক্ষরশিল্প) ছাপার জামা গায়ে দিয়ে এক তরুণী হামলার মুখে পড়তে বসেছেন। বিষয়টিকে ধর্মের প্রতি অবমাননা উল্লেখ করে বাজারে একদল লোক তাঁকে পিটুনি দিতে উদ্যত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে।
গত রোববার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের ইছরা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুলিশ তাৎক্ষণিক সাড়া না দিলে ওই তরুণীর সঙ্গে আরও খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারত। দেশটিতে বিভিন্ন সময়ে ধর্ম অবমাননার (ব্লাসফেমি) অভিযোগ এনে গণপিটুনিতে অনেক হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেউ একজন বাজারে ছড়িয়ে দেন ওই তরুণীর জামার ছাপাগুলো পবিত্র কোরআনের বাণী। এই খবরে ওই তরুণীকে ঘিরে ক্রেতা, দর্শনার্থী ও পথচারীদের একটি অংশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় বাজারের পোশাক ব্যবসায়ীরা তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ব্যবসায়ীরা ওই তরুণীকে একটি দোকানের মধ্যে নিয়ে যান এবং উত্তেজিত জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, তাঁর জামায় যে ছাপ দেওয়া, তা আদৌ কোরআনের কোনো বাণী নয়, এগুলো আরবি অক্ষরশিল্প মাত্র। যা পাকিস্তানের বাজারে সচরাচর পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওই ব্যাখ্যা শোনার পর উত্তেজিত জনতার একটি পক্ষ শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও একটি পক্ষ তরুণীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলতেই থাকে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, ধর্ম অবমাননার অভিযোগের জনরোষ থেকে বাঁচতে ওই তরুণী একটি দোকানের ভেতর লুকিয়ে আছেন। এ সময় তাঁকে ভয়ে কাপতে দেখা গেছে। পরে পুলিশ সদস্যদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর তাঁরা দুটি দলে ভাগ হয়ে একটি দল উত্তেজিত জনতাকে সামনে এগোনো থেকে বিরত রাখেন ও বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেন। আর পুলিশের অপর দলটি তরুণীকে কাপড় দিয়ে ঢেকে বাইরে নিয়ে যান।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ওই তরুণী বারবার বলছেন তিনি কোনো ধর্ম অবমাননা করেননি। এমনকি এ ধরনের পোশাক পরার ক্ষেত্রে তাঁর ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যও ছিল না। এমন নকশার পোশাক সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশে সচরাচর পরা হয় বলেও তরুণী উল্লেখ করেন।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে গুলবার্গ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শেহর বানু জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ওই তরুণীর জামার ছাপায় কোনো পবিত্র শব্দ লেখা নেই। জামায় যেসব শব্দ লেখা রয়েছে, তার মধ্যে একটির অর্থ ‘হালুয়া’।
ওই তরুণী থানায় এক ঘণ্টার মতো পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়, ওই জামায় কোরআনের কোনো বাণী লেখা নেই। এ খানে ধর্ম অবমাননার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।