পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ (বাঁয়ে) ও পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি
পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ (বাঁয়ে) ও পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি

নওয়াজের পিএমএল-এনকে সমর্থন দিতে চাপে বিলাওয়াল

পাকিস্তানে সরকার গঠন প্রশ্নে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির মধ্যে গতকাল সোমবারের বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবারও সর্বশেষ বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। জল্পনা শুরু হয়েছে, ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে সাংবিধানিক সময়সীমা পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে আলোচনা ও দর-কষাকষি চলতে থাকতে পারে।

দুই দলের সূত্র ডনকে বলছে, পিপিপির অনীহার কারণে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত হতে পারে। সরকারে যোগ দিতে নিজ দলের ভেতর থেকেসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে পিপিপি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে।

৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ৯৩ আসনে জয়ী হয়। এ ছাড়া নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৭৫ ও বিলাওয়ালের পিপিপি ৫৪ আসনে জয়ী হয়। বাকি আসনগুলোতে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়। নির্বাচনে কোনো দলই সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় আসন পায়নি।

পিটিআই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা সরকার গঠন করতে পিএমএল-এন বা পিপিপির সঙ্গে জোট করবে না। জাতীয় পরিষদের মোট ৩৩৬ আসনের মধ্যে সরকার গঠন করতে অন্তত ১৬৯ আসন দরকার।

পিপিপির নেতা কামার জামান কায়রা একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসতে এখনো ৮ থেকে ৯ দিন বাকি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হবে ২ বা ৩ মার্চ। সুতরাং যুক্তসংগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এখনো দুই পক্ষের কাছে যথেষ্ট সময় রয়েছে।

কায়রা বলেন, পিপিপি কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেবে, কোনো বৈঠকেই এমন কোনো আলোচ্যসূচি ছিল না। পিপিপি এখনো এ সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয়ের জন্য তারা পিএমএল-এনকে বলবে না।

কায়রা আরও বলেন, ‘আমরা কেবল আমাদের অভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে বসেছি, যাতে ভবিষ্যৎ সরকার গঠন ও এর কাজে কোনো ধরনের অচলাবস্থা তৈরি না হয়।’

আসিফ আলী জারদারি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হচ্ছেন কি না এবং পিএমএল-এনও একই পদে প্রার্থী দিচ্ছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে কায়রা বলেন, জোটে সাধারণত একদল আরেক দলের বিপক্ষে প্রার্থী দেয় না।

ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রণালি

সূত্র ডনকে জানায়, নতুন সরকার গঠনে সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে পিএমএল-এনের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি ও কেন্দ্রীয় সরকারে কিছু মন্ত্রণালয় পাওয়ার প্রতি সমর্থন দিচ্ছেন পিপিপির কিছু নেতা।

অবশ্য পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে পিএমএল-এনের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়ের বিরোধিতা করতে বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার গঠন করতে প্রয়োজনীয় সমর্থন দিতে কেবল পিপিপি রাজি হয়েছে।

এক দিন আগে পিপিপির প্রধান ক্ষমতা ভাগাভাগির ধারণা খারিজ করে বলেছেন, তিনি এ ধরনের চুক্তি করতে আগ্রহী নন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন ধরনের প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না।’

কায়রার মতে, সোমবারের বৈঠকে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল ভবিষ্যৎ সরকার গঠন ও ওই সরকারের কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি না হয়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।’

মজার বিষয়, পাঞ্জাব প্রদেশের সরকারে ক্ষমতার ভাগাভাগি চাচ্ছে পিপিপি। সেখানে পিএমএল-এন সরকার গঠনের ব্যাপারে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি পিপিপি জাতীয় পরিষদের স্পিকার, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সিনেট চেয়ারম্যানের পদ চাচ্ছে।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পিএমএল-এনের নেতা আজম নাজির তারার বলেন, আজকের (সোমবার) বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। কাল (মঙ্গলবার) আবার বৈঠক হবে। পিপিপি ও পিএমএল-এনের মধ্যে আলোচনা ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে।