আগাম নির্বাচন দেওয়ার দাবি নাকচ করে দিয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। আগামী বছরের আগস্ট পর্যন্ত মেয়াদ পূর্ণ করেই নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে শরিকদের বৈঠকে। গত রোববার পাঞ্জাব প্রদেশের উপনির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার পর এ ঘোষণা এল। খবর ডনের
উপনির্বাচনে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কাছে ধরাশায়ী হয় ক্ষমতাসীন জোট। এ নিয়ে ‘আত্মপর্যালোচনার’ জন্য গতকাল মঙ্গলবার বৈঠকে মিলিত হন জোটভুক্ত ৯ দলের শরিক নেতারা।
পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার কারণে পিটিআই জোটের কাছে প্রাদেশিক পরিষদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীনেরা। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারাতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হামজা শাহবাজ।
বৈঠকে জোটের নেতারা সর্বসম্মত মত দিয়েছেন, একটি প্রধান কারণে শাহবাজের নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করা উচিত। সেটা হলো, সরকার কঠিন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে হেরে তার মাশুল দিয়েছে।
তাই এখনই আতঙ্কিত হওয়ার এবং পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরানের খানের আগাম নির্বাচনের দাবি মেনে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে বৈঠকে মত দেন শরিক নেতারা।
একই সঙ্গে ছেলে হামজা শাহবাজের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদ টিকিয়ে রাখতে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ গ্রহণ ও সম্ভব সব উপায় বের করতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে জোটের শরিকেরা। মুখ্যমন্ত্রী পদে হামজার প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই-পিএমএল-কিউ (পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ) জোটের চৌধুরী পারভেজ এলাহি।
একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রায় সবাই জোর দিয়েই সরকারকে আগামী বছরের আগস্ট নাগাদ মেয়াদ পূর্ণ করার পরামর্শ দেন। সূত্রে বলা হয়, ‘অর্থনীতি নিয়ে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী বছর আমরা সাধারণ নির্বাচনে গেলে পরিস্থিতি হবে ভিন্ন। ইমরানকে আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং তাঁর ওপর আমরা কঠোর হব এবং সমুচিত জবাব দেব।’
জোটের মূল শরিক পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও জমিয়ত উলামা-ই-ইসলাম ফজলের (জেইউআই-এফ) নেতারা শাহবাজকে আদাজল খেয়ে নামতে বলেছেন। কঠিন লড়াই ছাড়া যাতে পাঞ্জাবকে পিটিআই-পিএমএল-কিউ জোটের হাতে ছেড়ে দেওয়া না হয়, তাঁরা সেটি বলেছেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের উদ্ধৃত করে সূত্রটি বলেছে, ‘হামজার পদত্যাগ করা উচিত হবে না। যেকোনো মূল্যে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী রাখতে জোট কোনো না কোনো উপায় বের করবে।’
এই জমায়েতের সময় পিপিপি নেতা আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে কিছু সময় কাটান হামজা শাহবাজ এবং পদ ধরে রাখতে কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ’ নেন।
অংশগ্রহণকারীদের একজন বলেন, ‘পাঞ্জাব হারানো মানে কেন্দ্র হারানো। আমরা এই ভার বহন করতে পারব না। পাঞ্জাবের জোট সরকার টেকাতে প্রয়োজনীয় সব বৈধ উপায় বের করুন।’ বৈঠকের কেউ এর সঙ্গে দ্বিমত করেননি।
পিএমএল-এন প্রার্থী হামজা শাহবাজকে ভোট দেওয়ায় পিটিআইয়ের ২০ জনের আসন শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। রোববার এসব আসনে ভোট হয়। বেসরকারি ফলাফলে ১৫টিতেই জয় পেয়েছে পিটিআই। চারটি আসনে জয় পায় পিএমএল-এন। বাকি আসনটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
লাহোর হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, ২২ জুলাই ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই ভোটাভুটিতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজকে সরিয়ে এখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে পিটিআই।
সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, ৩৭১ আসনের পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে পিটিআইয়ের আসন সংখ্যা ১৭৮। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ১৮৬ আসনের প্রয়োজন হলেও চিন্তা নেই ইমরানের। কারণ, মিত্র পিএমএল-কিউয়ের ১০টি আসন রয়েছে।