পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) অভিযোগ করেছে, দেশের জনগণ তাঁদের নেতা ইমরান খানের পক্ষে রায় দিলেও সেই ‘জনরায় (ম্যান্ডেট) রাতের আঁধারে চুরি করা হয়েছে’। এদিকে ইমরান খান বলেছেন, জনরায় উপেক্ষা করে ভোট চোরদের নিয়ে সরকার গঠন করা হলে দেশ আরও অস্থিতিশীলতার দিকে যাবে।
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) ছয় দলটি গতকাল মঙ্গলবার রাতে জোট করে সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এই দলগুলোই দুই বছর আগে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ইমরান খান সরকারকে হটিয়ে জোট সরকার গঠন করেছিল। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ। এবারও শাহবাজ শরিফ নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
ছয় দলের জোট গঠনের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় পিটিআইয়ের মুখপাত্র রউফ হাসান আজ বুধবার তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘পাকিস্তানকে আরও অস্থিতিশীলতার পথে ঠেলে দেওয়া হলো। জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, এমন একদল অপরাধী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, দেশ এখন মারাত্মক সংকটের মধ্যে আছে।’
রউফ হাসান বলেন, ‘পাকিস্তানকে এই গভীর সংকট থেকে বের করে আনার ক্ষমতা আছে একমাত্র ইমরান খানের। তাঁর প্রতিই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আস্থা রেখেছেন। কিন্তু তাঁর পক্ষে দেওয়া এই জনরায় (ম্যান্ডেট) রাতের আঁধারে চুরি করা হয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক নীতি ও মূলবোধের ওপর চরম আঘাত। অন্ধকারের শক্তিকে অবশ্যই থামাতে হবে এবং জনগণ যাঁদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে, তাঁদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
এদিকে গতকাল রাতে পরিবারের মাধ্যমে কারাগার থেকে ইমরান খানের পাঠানো একটি বার্তা তাঁর এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করা হয়। ইমরান খান তাতে বলেছেন, ‘পিটিআইকে দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁদের ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটেছে।’
ইমরান খান বলেছেন, ‘দেশের মানুষ স্পষ্ট করে তাদের রায় দেওয়ায় পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। চুরি করা ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করার বিরুদ্ধে আমি সাবধান করে দিচ্ছি। দিনদুপুরে এমন (ভোট) চুরি শুধু দেশের জনগণের প্রতি অসম্মান নয়, একই সঙ্গে এটা দেশের অর্থনীতিকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।’
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হন ইমরান খানের পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৬৫ আসনে। একটি আসনে ফল স্থগিত হওয়ায় ২৬৪ আসনের ফল ঘোষিত হয়েছে। স্বতন্ত্র হিসেবে বিজয়ী ১০১ প্রার্থীর মধ্যে ৯২ জন পিটিআই-সমর্থিত। এ ছাড়া পিএমএল-এন ৭৫ আসনে ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪ আসনে জয়ী হয়েছে। পিএমএল-এন ও পিপিপি ছাড়া আরও চারটি দল জোট করে সরকার গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে।