পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে লংমার্চ শুরু করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মধ্যে হামলায় গুলিবিদ্ধ হওয়ায় কয়েক দিন তিনি এ কর্মসূচি থেকে দূরে ছিলেন। তবে লংমার্চ চলেছে। অবশেষে বিশ্রাম শেষে আজ শনিবার লংমার্চে ফিরেছেন ইমরান। রাওয়ালপিন্ডিতে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মৃত্যুভয় দূর করে রাজপথে লড়াই চালিয়ে যেতে। খবর দ্য ডন ও জিও নিউজের।
রাওয়ালপিন্ডির সমাবেশে ইমরান খান বলেন, ‘জাতির সামনে এখন দুটি পথ খোলা। একটি আশীর্বাদ ও মহানুভবতার; অন্যটি অপমান ও ধ্বংসের। এখন জাতিকে যেকোনো একটি পথ বেছে নিতে হবে।’ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘যদি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চান, তাহলে মৃত্যুভয় থেকে নিজেদের মুক্ত করুন, রাজপথে নামুন। ভয় পুরো জাতিকে দাসে পরিণত করবে।’
এ সময় পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, ইমরান খান প্রমাণ করেছেন, তিনি মাথানত করবেন না। তিনি লক্ষ্যের পথে অবিচল এগিয়ে যাবেন।
গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে এক অনাস্থা ভোটে পতন হয় ইমরানের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের। এর পর থেকেই তিনি আগাম নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ ও লংমার্চ করছেন। ইমরানের নেতৃত্বে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। এরপর যত দিন গড়িয়েছে এই কর্মসূচিতে জনসমাগম ততই বেড়েছে। ৩ নভেম্বর পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চ করছিলেন। এ সময় তাঁর ওপর হামলা হয়। পায়ে গুলি লাগে তাঁর।
জাতির সামনে এখন দুটি পথ খোলা। একটি আশীর্বাদ ও মহানুভবতার; অন্যটি অপমান ও ধ্বংসের। এখন জাতিকে যেকোনো একটি পথ বেছে নিতে হবে– ইমরান খান, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান
হামলায় পিটিআইয়ের এক সমর্থক নিহত হন। দলটির কয়েকজন নেতা-কর্মীও আহত হন। এর পরপরই লংমার্চ স্থগিত করা হয়। ইমরান অভিযোগ করেন, হামলায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা জেনারেল ফয়সাল নাসির জড়িত। সপ্তাহখানেক পর ১০ নভেম্বর আবার লংমার্চ শুরু হয়।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর লাহোরের শওকত খানুম হাসপাতালে ছিলেন ইমরান। পরে সেখান থেকে তাঁকে জামান পার্কের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানেই বিশ্রামে ছিলেন তিনি। আজ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে রাওয়ালপিন্ডিতে পৌঁছান তিনি। এরপর সন্ধ্যায় তিনি হেলিকপ্টারে সমাবেশস্থল রেহমানাবাদে যান।
এর আগে আজ সকাল থেকেই পিটিআইয়ের লাখো কর্মী-সমর্থক মিছিল নিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে পৌঁছান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয় পড়া ছবি ও ভিডিওতে সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ সময় অনেকে ইমরানের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড ও পিটিআইয়ের দলীয় পতাকা বহন করেন। লংমার্চ ঘিরে পুরো রাওয়ালপিন্ডি নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলে পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় চেক পয়েন্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হয়।
ইমরানের এই কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করেছে পাকিস্তান সরকার। তাদের দাবি, দেশকে অস্থিতিশীল করতে এ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছেন ইমরান। আজ দেশটির তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব টুইটে বলেন, পিটিআই দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। দলটির নেতা-কর্মীরা সহিংস আচরণ করছেন, এমনকি সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, এটা লজ্জাজনক।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নেওয়াজ টুইটে বলেন, ইমরান খানের লংমার্চ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এভাবেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। পিটিআই লংমার্চের নামে একের পর এক নাটক করছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহর দাবি, জাতি ইমরান খানের লংমার্চ ‘বয়কট’ করেছে। আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, পুরো দেশ থেকে মাত্র কয়েক হাজার মানুষ জড়ো করতে পেরেছে পিটিআই। তাদের এই কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে। ইমরানের উদ্দেশে তিনি রাজপথ ছেড়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
এর আগে গতকাল শুক্রবার ইমরান খানকে রাজপথের আন্দোলন ছেড়ে পার্লামেন্টে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন রানা সানাউল্লাহ। তিনি বলেছিলেন, নিজেদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিরাপত্তার স্বার্থে লংমার্চ এখনই বন্ধ করা উচিত পিটিআইয়ের।
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ইমরানকে রাজপথ ছেড়ে পার্লামেন্টে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। তা না হলে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের দায়ভার তাঁকেই (ইমরান) নিতে হবে।