সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ (মাঝে)। রোববার, রাজধানী কাবুলে
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ (মাঝে)। রোববার, রাজধানী কাবুলে

আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় সহায়তা করছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবেশী আফগানিস্তানের সঙ্গে যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছে, সেটার আঁচ আগেই পাওয়া গিয়েছিল। আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদের বক্তব্যে সেটাই প্রমাণিত হলো। তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াকুব অভিযোগ করেন, তাঁর দেশের ভূখণ্ডে একের পর এক ড্রোন হামলা চালাতে মার্কিন বাহিনীকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিচ্ছে পাকিস্তান।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হওয়ার এক মাস না পেরোতেই তালেবানের পক্ষ থেকে এমন গুরুতর অভিযোগ তোলা হলো।

কাবুলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘কাবুলের আকাশে এখনো মার্কিন ড্রোন উড়তে দেখা যায়। আমরা খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, যুক্তরাষ্ট্রের এসব ড্রোন পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে আফগানিস্তানে ঢুকছে।’

এ সময় ইয়াকুব মুজাহিদ আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি, পাকিস্তান সরকার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় ২০ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গত বছরের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসে। তালেবানের ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তান থেকে নিজেদের মিশন গুঁটিয়ে নেয়। বিদেশি সহায়তার বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে যায় আফগানিস্তানে।

অভিযোগ রয়েছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের সঙ্গে তালেবানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পাকিস্তান নানাভাবে সহায়তা করছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। তবে গত এপ্রিলে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তালেবানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সরকারের সময় সীমান্তে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে।

আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোনের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ বলেন, ‘এটা আফগানিস্তানের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নির্লজ্জভাবে এসব করছে। আমরা (তালেবান সরকার) যুক্তরাষ্ট্রের এমন বেআইনি কার্যক্রমে নিন্দা জানাই। দ্রুত এসব কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানাই।’ মুহাজিদ বলেন, আফগানিস্তানে ড্রোন মোতায়েন পরিষ্কারভাবে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন।

তালেবান নেতার এমন অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তান সরকার কিংবা দেশটির ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এর আগে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে করা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। বিশেষত আল-কায়েদা নেতা জাওয়াহিরি নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান বলেছিল, এই ঘটনায় তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করা হয়নি।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলার পর আল-কায়েদাকে দমনের নামে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে মার্কিন প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে ওই বছরের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে হামলা চালানো শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী। প্রায় দুই দশক যুদ্ধের পর গত বছর আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনী।

তখন তালেবানের পুনরুত্থান ঘটে। পশ্চিমা–সমর্থিত সরকারকে হটিয়ে গত বছরের ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে তালেবান। এর মাধ্যমে তারা আফগানিস্তানে ক্ষমতায় বসে।
সম্প্রতি কাবুলে জাওয়াহিরিকে হত্যার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোনের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। তবে ওই সময় তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাওয়াহিরি কাবুলে অবস্থান করছেন, এটা তাঁরা জানতেন না।

এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা বেড়েছে। বিশেষত তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর এটা অনেকটাই প্রকট হয়েছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, আফগানিস্তান থেকে এসে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়মিত সীমান্ত এলাকায় হামলা চালাচ্ছে।

তবে তালেবান বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এখন পাল্টা অভিযোগ, আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে মার্কিন ড্রোনের কার্যক্রম পরিচালনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তারা। দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে মূলত আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিমান হামলা। এপ্রিলে চালানো ওই হামলায় বেশ কিছু মানুষ হতাহত হন।