পাকিস্তানে এক তরুণীকে (১৮) হত্যার ঘটনায় তদন্তে নেমেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ‘পরিবারের সম্মান রক্ষা করার জন্য’ ওই তরুণীকে হত্যা (অনার কিলিং) করেছেন পরিবারের সদস্যরা। কেননা, এক ব্যক্তির সঙ্গে ওই তরুণীর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, যদিও ছবিটি ভুয়া।
ঘটনাটি ঘটেছে খাইবার পাখতুনখাওয়ার প্রত্যন্ত কোহিস্তান এলাকায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই তরুণীকে গত সপ্তাহে তাঁর বাবা ও চাচা গুলি করে হত্যা করেছেন। স্থানীয় আদিবাসী কাউন্সিলের (জিরগা) বয়োজ্যেষ্ঠদের নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তাঁরা।
ভুক্তভোগী তরুণীর নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ ওই তরুণীর বাবাকে আটক করেছে আর চাচা পলাতক।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ গত সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিহত তরুণীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া ব্যক্তিদেরও খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে তরুণীর সঙ্গে যে ব্যক্তিকে দেখা গেছে, তাঁকেও পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কেননা, জিরগার বয়োজ্যেষ্ঠরা তাঁরও মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও এক নারী-পুরুষের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের ছবিটিও ভুয়া। এ ছবির কারণে ওই ছবিতে থাকা দুজনও হত্যার হুমকি পেয়েছেন।
এর পরপরই ভুক্তভোগী ওই নারীকে হেফাজতে নেওয়া হয়। যদিও পরে পরিবারের কাছে তাঁকে তুলে দেওয়া হয়। ওই নারী পুলিশকে জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্যদের কাছে তাঁর কোনো ঝুঁকি নেই। তিনি নিরাপদে থাকবেন।
পুলিশ বলছে, দুটি ঘটনাতে ফটোশপের মাধ্যমে ছবি জোড়া দিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। প্রতিবছর পাকিস্তানে কয়েক শ নারী ‘পরিবারের সম্মান বাঁচাতে’ হত্যার শিকার হন। কিছু পুরুষও এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তবে তাঁদের সংখ্যা কম।
২০১৬ সালে পাকিস্তান সরকার এ-সংক্রান্ত আইন সংস্কার করে। আগে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে ক্ষমা পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কারাদণ্ডের মেয়াদ কমিয়ে আনার সুযোগ ছিল। নতুন আইনে এর বদলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পাকিস্তানে আইন পরিবর্তনের পরও হত্যাকারীরা বিভিন্ন উপায়ে বিচার এড়িয়ে যাচ্ছেন। এসব সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ‘পরিবারের সম্মান রক্ষায়’ হত্যাকাণ্ড বন্ধে আন্দোলন করে আসছে।