বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব খুন হয়েছেন বা রাষ্ট্রযন্ত্র প্রভাবিত বিচারব্যবস্থায় তাঁদের ফাঁসি হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এসব ঘটনা সম্পর্কে এখনো পাঠকদের জানার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। তাঁদের আগ্রহের কথা চিন্তা করে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টার বিচার ও ফাঁসি নিয়ে বিশেষ লেখা।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর উত্থান নাটকীয়, পতন করুণ।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জরুরি বার্তা দিয়ে বিশেষ উড়োজাহাজ পাঠিয়ে বিদেশে অবস্থানরত ভুট্টোকে ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশে নিয়ে আসেন।
ঠিক কী হতে যাচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে জানতেন না ভুট্টো।
উড়োজাহাজ থেকে সদ্য ভাগ হয়ে যাওয়া পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে নামার কয়েক ঘণ্টার মাথায় জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছ থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ভুট্টো।
অবশ্য ভুট্টো ক্ষমতার শিখরে যাওয়ার আগে ইস্কান্দার মির্জা ও আইয়ুব খানের মন্ত্রী ছিলেন।
মন্ত্রী থেকে রাজনীতিবিদ
১৯২৮ সালের ৫ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া জুলফিকার আলী ভুট্টো সিন্ধুর রাজপুত্র গোত্রের সদস্য। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, পরে যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার পাট চুকিয়ে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানে ফেরেন তিনি। দেশে ফিরে আইন পেশায় যুক্ত হন।
পশ্চিম পাকিস্তানের তৎকালীন অভিজাত শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে ভুট্টোদের পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। আর ভুট্টোর নিজের শিক্ষা-দীক্ষা-দক্ষতা তো ছিলই। ফলে রাজনীতিবিদ না হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে মাত্র ৩০ বছর বয়সী ভুট্টোকে বাণিজ্যমন্ত্রী করেন প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা। এর মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় ওই বছরের অক্টোবরেই ইস্কান্দারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন তাঁর সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব।
ঘনিষ্ঠতার সুবাদে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব মন্ত্রিসভায় ভুট্টোকে রাখেন। একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন তাঁকে। ১৯৬৩ সালে ভুট্টোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন আইয়ুব। আইয়ুবের রাজনৈতিক দল কনভেনশন মুসলিম লিগের সাধারণ সম্পাদকও হন ভুট্টো।
আইয়ুবের সঙ্গে ভুট্টোর মতভেদ, দূরত্ব ক্রমেই বাড়তে থাকে। এর পূর্ণাঙ্গ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৫ সালে, পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময়।
১৭ দিনের এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায়, পাকিস্তান রাষ্ট্রে চরম অবহেলা-বঞ্চনা-বৈষম্যের শিকার পূর্ব বাংলা সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে বিরোধী দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিসংবলিত ছয় দফা পেশ করেন। ছয় দফা হয়ে ওঠে বাঙালির ‘মুক্তির সনদ’।
প্রায় আট বছর একত্রে কাজ করার পর ১৯৬৬ সালের জুনে আইয়ুবের মন্ত্রিসভা ছাড়েন ভুট্টো। ১৯৬৭ সালে তিনি তাঁর নিজের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) গঠন করেন।
পিপিপি গঠিত হওয়ার আগে থেকেই আইয়ুবের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলায় আন্দোলনে ছিল আওয়ামী লীগ। পশ্চিম পাকিস্তানে এই আন্দোলনে যুক্ত হয় পিপিপি। যদিও দুই দলের দাবি–দাওয়ায় পার্থক্য ছিল।
সামরিক অভিযানে ভুট্টোর উসকানি
১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে পাকিস্তান সরকার। আগে থেকে কারাগারে থাকা শেখ মুজিবকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গণ-আন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিবসহ সব বন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের গণসংবর্ধনায় শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান তাঁর সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেন। পাকিস্তানে নতুন করে জারি হয় সামরিক শাসন। ইয়াহিয়ার ক্ষমতা গ্রহণকে স্বাগত জানান ভুট্টো।
মূলত ছয় দফার ওপর ভিত্তি করে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ভুট্টো তাঁর নির্বাচনী প্রচারে শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত পাকিস্তানের কথা বলেছিলেন।
নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ সাতটি সংরক্ষিত নারী আসনসহ মোট ১৬৭ আসন পায়। ভুট্টোর পিপিপি চারটি সংরক্ষিত নারী আসনসহ মোট আসন পায় ৮৫টি।
কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের অধিকারের তীব্র বিরোধিতায় নামেন ভুট্টো। নতুন সরকার গঠনে পিপিপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা চাইছিলেন তিনি। ইয়াহিয়ার চাওয়াও ছিল একই। ক্ষমতা হস্তান্তরে শুরু হয় টালবাহানা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
ভুট্টোর রাজনৈতিক উসকানি ও ফাঁদে পা দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালির ওপর হামলে পড়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে তারা ইতিহাসের নৃশংস ও জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি অর্জন করে চূড়ান্ত বিজয়। পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় কূটনৈতিক তৎপরতার দায়িত্ব নিয়ে ভুট্টো তখন অবস্থান করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘে।
ভুট্টোর নাটকীয় উত্থান
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর ভুট্টোর দ্রুত দেশে ফেরার ডাক পড়ে। বাংলাদেশের বিজয়ের প্রায় ১০০ ঘণ্টার ব্যবধানে খণ্ডিত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন ভুট্টো। নিজের রাজনৈতিক জীবনের মাত্র ১৩ বছরের মাথায় তিনি পরাজিত, বিপর্যস্ত, দ্বিখণ্ডিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আরোহণ করেন।
২৪ ডিসেম্বর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন ভুট্টো। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন ভুট্টো। পাকিস্তানে সাড়ে ৯ মাসের বন্দিজীবন শেষে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পৌঁছান।
প্রেসিডেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী
ঘরে-বাইরে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ ভুট্টোর ওপর চেপে বসে। তিনি তাঁর প্রেসিডেন্টের মেয়াদকালে ভারী শিল্প, ব্যাংক-বিমা জাতীয়করণ করেন। ঘোষণা করেন নতুন শ্রমনীতি। ভূমি, কৃষি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। সূচনা করেন পারমাণবিক কর্মসূচি। ভারতের হাতে থাকা ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দীকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি করেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেন। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন। চালু করেন পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা।
নতুন ব্যবস্থায় ১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্ট ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি ইচ্ছেমতো সংবিধান সংশোধন করেন। খর্ব করেন নানা অধিকার। আঘাত করেন উচ্চ আদালতের মেরুদণ্ডে।
ভুট্টো ক্রমেই চড়াও হন তাঁর দল ও দলের বাইরের বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর। অনেকটা ‘নিজস্ব কাজ’ করানোর জন্য তিনি গঠন করেন গোপন ধাঁচের পেটোয়া আধা সামরিক বাহিনী—ফেডারেল সিকিউরিটি ফোর্স (এফএসএফ)। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম, খুনের অভিযোগ ওঠে।
ভুট্টোর কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সব অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। তাঁর জনপ্রিয়তায়ও ব্যাপক ধস নামে। এমনকি জনবিক্ষোভ তৈরি হয়।
ভুট্টো ক্ষমতাচ্যুত
আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে ভুট্টো ১৯৭৭ সালের ৭ মার্চ আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। ভুট্টোকে হটাতে বিরোধীরা পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (পিএনএ) নামের ৯–দলীয় জোট গঠন করে।
নির্বাচনে জয়লাভ করে পিপিপি। তবে এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তোলে পিএনএ। তারা ভুট্টোর নতুন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে পুনর্নির্বাচন দাবি করে। ভুট্টোর পদত্যাগ চায় তারা।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের আন্দোলন সহিংস রূপ নিতে থাকে। বিরোধীরা প্রকাশ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ চায়। চাপে পড়ে ভুট্টো ছাড় দিতে রাজি হন। নতুন নির্বাচন নিয়ে পিএনএর সঙ্গে একটা সমঝোতাও হয়।
এর মধ্যে ১৯৭৭ সালের ৫ জুলাই রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করেন তাঁরই নিয়োগ করা সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া-উল-হক। এদিনই ভুট্টোকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে আটক করে রাখা হয়।
ক্ষমতা দখল করে জিয়া–উল–হক সামরিক আইন জারি করেন। স্থগিত করেন সংবিধান। তিনি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন।
প্রায় এক মাস আটক রাখার পর জুলাইয়ের শেষ দিকে ভুট্টোকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভুট্টোর ফাঁসি
পথের কাঁটা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে সরাতে ১৯৭৪ সালের একটি হত্যাকাণ্ডকে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন জিয়া।
লাহোরের রাজনীতিবিদ আহমেদ রাজা কাসুরি পিপিপি করতেন। সত্তরের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে ছিলেন তিনি। ভুট্টোর আপত্তি সত্ত্বেও তিনি ঢাকা এসেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সংবিধানসহ নানা বিষয়ে ভুট্টোর সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়। ১৯৭৪ সালে তাঁর গাড়িতে হামলা হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর বাবা নওয়াব মোহাম্মদ আহমেদ খান কাসুরি নিহত হন।
বাবা হত্যার ঘটনায় তখনই রাজা কাসুরি থানায় এফআইআর করেন। এ হামলায় ভুট্টোর হাত থাকার অভিযোগ তোলেন তিনি। ১৯৭৫ সালের অক্টোবরে মামলাটি বাতিল হয়ে যায়। পুরোনো এফআইআরটি ১৯৭৭ সালে পুনরুজ্জীবিত করেন জিয়া।
আহমেদ খান কাসুরি হত্যার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ১৯৭৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি লাহোর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। একই মামলায় দিনকয়েক পরে তাঁকে সামরিক আইনে গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৭৭ সালের অক্টোবরে বিচারিক আদালতের পরিবর্তে সরাসরি লাহোর হাইকোর্টে ভুট্টোর বিরুদ্ধে হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ১৯৭৮ সালের ১৮ মার্চ লাহোর হাইকোর্ট ভুট্টোকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। পিপিপি–প্রধানকে ছেড়ে দিতে জিয়ার কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন ভুট্টোর ব্যক্তিগত বন্ধু লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। ভুট্টোর ফাঁসির রায়ের পর গাদ্দাফি আবার একই অনুরোধ জানান। এবার তিনি ভুট্টোকে লিবিয়ায় নিয়ে যেতে পাকিস্তানে উড়োজাহাজ (প্রেসিডেনশিয়াল এয়ারক্র্যাফট) পাঠান। তবে গাদ্দাফির সব আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন জিয়া।
১৯৭৯ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন। রিভিউ আবেদনেও একই রায় বহাল থাকে।
জিয়ার কাছে ক্ষমার আবেদন জানাতে রাজি ছিলেন না ভুট্টো। তবে তাঁর পক্ষে বড় বোন এই আবেদন করেন। ক্ষমার আবেদন নাকচ করেন জিয়া।
১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল দিবাগত রাত দুইটায় রাওয়ালপিন্ডি জেলা কারাগারে ফাঁসির মাধ্যমে ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ভুট্টোর সমর্থকেরা এই ফাঁসিকে বিচারিক হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেন।
ভুট্টোকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পর্যালোচনা করে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া হয় ২০১১ সালে। সর্বোচ্চ আদালতের কাছে এই মতামত (প্রেসিডেনশিয়াল রেফারেন্স) চান পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। তিনি জুলফিকার আলীর মেয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর স্বামী।
চলতি বছরের ৬ মার্চ পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মত আদেশে বলেন, ভুট্টোর বিচার স্বচ্ছ ও যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে হয়নি।
তথ্যসূত্র
আলতাফ পারভেজ (২০২৩), জুলফিকার আলী ভুট্টো: দক্ষিণ এশিয়ার কুলীন রাজনীতির এক অধ্যায়, বাতিঘর।
স্ট্যানলি উলপার্ট (১৯৯৩), জুলফি ভুট্টো অব পাকিস্তান: হিজ লাইফ অ্যান্ড টাইমস, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।
ডন ও নিউইয়র্ক টাইমস।