ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান। দেশটির অর্থনীতিও বিপর্যয়ের মুখে। রাজনীতিও অস্থির। এ অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি কী করবেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেই উত্তর দিয়েছেন ইমরান সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী মুসলিম লিগের প্রধান (এএমএল) শেখ রশিদ আহমেদ। রোববার তিনি বলেন, ইমরান খুব চুপ করে বসে থাকবেন না। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই তিনি আন্দোলন শুরু করবেন। আবার তিনি ইসলামবাদ অভিমুখে লং মার্চ করবেন। শিগগিরই ইমরান খানের কাছ থেকে এ ঘোষণা আসতে পারে।
ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত এএমএল নেতা শেখ রশিদ। পাকিস্তানের বর্তমান জোট সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সরকার জনগণের ওপর আরও ৬০৮ বিলিয়ন রুপি করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।
পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরাট শহরে ইমরান খানের এক জনসভার পরদিনই শেখ রশিদ এ মন্তব্য করলেন। সমাবেশে ইমরান খান আদালতে মামলা দিয়ে তাঁর দলের কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তা না হলে আবার সমর্থকদের নিয়ে ইসলামাবাদের অভিমুখে লং মার্চের হুমকি দেন তিনি।
দেশের মুদ্রাস্ফীতি ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এখন প্রশ্ন করি, পেট্রল কেন এত দামি? তারা বলে, আইএমএফের শর্তেই এটা করতে হয়েছে।ইমরান খান, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
শেখ রশিদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সরকারের সঙ্গে ৬০৮ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি উদ্ধারের আরেকটি চুক্তি করেছে। প্রথমে সরকার জাতীয় রাজস্ব লুটেছে। এখন তারা আবার মানুষের পকেট কাটছে।’
সিন্ধু প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতির উল্লেখ করে পাকিস্তানের এই রাজনীতিবিদ বলেন, আকস্মিক বন্যা সিন্ধু প্রদেশের মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। এ বন্যা পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) সম্মান নষ্ট করে দিয়েছে। শেখ রশিদ আরও বলেন, যেখানে দেশের মানুষই এই অর্থ পাচারকারীদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, সেখানে অন্য দেশ কীভাবে তাদের সাহায্য করবে? তিনি জানান, মানুষ এখন বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছে না। পেট্রল কিনতে পারছে না। সরকার আবার তাদের ওপর করের বোঝা চাপানোর পরিকল্পনা করছে।
আবার ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রা
ইমরান খান আগেই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নিপীড়ন বন্ধ না হলে আবার লং মার্চ করবেন তিনি। ইসলামাবাদে এলে এ সরকারের লুকানোর কোনো জায়গা থাকবে না। গুজরাটে জনসমাবেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘পিটিআই সরকারও আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় ছিল। কিন্তু পিটিআই সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। ওই সময় আমার ওপর আইএমএফের কাছে দেশ বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু এখন দেশের মুদ্রাস্ফীতি ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এখন প্রশ্ন করি, পেট্রল কেন এত দামি? তারা বলে, আইএমএফের শর্তেই এটা করতে হয়েছে।’
ইমরান খান বর্তমান জোট সরকারের নেতাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যাঁরা মুদ্রাস্ফীতির নামে পিটিআই সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন, তাঁরা এখন ক্ষমতার শেষের প্রান্তে চলে এসেছেন। ইমরান আরও বলেন, ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। যত চেষ্টাই করুক না কেন, পিডিএম জোট এ ম্যাচ জিততে পারবে না।
এর আগে গত মে মাসে ইমরান খান ইসলামাবাদে সমাবেশ করেন। পুলিশি বাধা ও গুলির মুখেও ব্যাপক সাড়া পান তিনি। ‘আজাদি মার্চ’ নামের ওই সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিতে সরকারকে ছয় দিনের সময় বেঁধে দেন। ডি-চকে অবস্থান নেওয়া পিটিআই নেতা-কর্মীরা ইসলামাবাদের বিধিনিষেধ আরোপিত ‘রেড জোনে’ প্রবেশ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর রেড জোনে অবস্থিত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দেয় সরকার।
মামলা ঝুলছে ইমরানের ওপর
গত এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। তিনি অভিযোগ করেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো হয়েছে। এরপর নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ করছেন ইমরান। এর মধ্যেই দেশটিতে গত জুন থেকে ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়। শুরুতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পড়ে বেলুচিস্তান প্রদেশ। এরপর দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আগস্টের শেষে মৃত্যুসংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়।
বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর অস্ত্র পেয়ে যান ইমরান খান। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে বাজিমাত করে বসে তাঁর দল পিটিআই। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবার প্রাদেশিক পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেয় পিটিআই। তবে সরকার পক্ষ বসে থাকেনি। ইমরানের জনপ্রিয়তায় ধস নামাতে তৎপর হয়ে ওঠে সরকার।
ইমরানের অভিযোগ, পিটিআই নেতাদের নানাভাবে হেনস্তা করছে সরকার। এ ছাড়া ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সঙ্গে দলটির সম্পর্কে দেয়াল টানতেও সরকার কূটকৌশলে লিপ্ত বলে পিটিআইয়ের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন। পিটিআইয়ের এক নেতাকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন ইমরান। এ জন্য জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ও এক বিচারককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাঁর বিরুদ্ধে গত ২০ আগস্ট মামলা হয়। সেই মামলায় এখন জামিনে আছেন ইমরান। ১২ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হলে তা ভয়াবহ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ইমরানের সুরক্ষা দিতে রাজপথে থাকার কথাও বলেছেন তাঁরা।
জিও নিউজ ও ডন অবলম্বনে