কেনিয়ায় পুলিশের গুলিতে পাকিস্তানি সাংবাদিক নিহত

কেনিয়াতে পাকিস্তানের এক স্বনামধন্য সাংবাদিক আরশাদ শরিফ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গতকাল রোববার রাতে নাইরোবি-মাগাদি মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। দেশটির গণমাধ্যম স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, ভুলবশত তাঁকে অন্য আরেকজন মনে করে পুলিশ গুলি করেছে।

তবে কেনিয়ার গণমাধ্যমের খবরে পাকিস্তানের সন্দেহ তৈরি হয়েছে। দেশটির সাংবাদিক মহল ও মানবাধিকার সংস্থা সরকারের কাছে এ ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করে তা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে।

আরশাদ শরিফ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কড়া সমালোচক এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বড় সমর্থক ছিলেন।

ইরমান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে (শরিফ) হয়রানি করে আসছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন। এরপর গত মে মাসে ৪৯ বছর বয়সী এই সাংবাদিক দেশ ছাড়েন। কেনিয়া আসার আগে তিনি যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ে ছিলেন। পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় তিনি কী করতেন, তা স্পষ্ট নয়।

শরিফের সাবেক সহকর্মী কাশিফ আব্বাসী এ ঘটনাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি এ ঘটনাকে হৃদয়বিদারক বলে অভিহিত করেছেন।

এআরওয়াই নিউজের উপস্থাপক কাশিফ আব্বাসী টুইট করে লিখেছেন, ‘আমার ভাই, আমার বন্ধু, আমার সহকর্মী আরশাদ শরিফকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে …আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা হৃদয়বিদারক। এটা টিক হয়নি…এটা বেদনাদায়ক…আমি তোমাকে ভালোবাসি ভাই।’

এআরওয়াই ডিজিটাল নেটওয়ার্ক প্রেসিডেন্ট ও সিইও সালমান ইকবাল বলেন, ‘আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি বাক্‌রুদ্ধ, আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দান করুন।’
আরেক বিশিষ্ট সাংবাদিক হামিদ মীর টুইট করে লিখেছেন, অবিশ্বাস্য। মহান আল্লাহ তাঁর আত্মাকে শান্তি দান করুন।


এ ঘটনায় পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, সাংবাদিকদের স্তব্ধ করার জন্য সহিংস কৌশলের একটি দীর্ঘ এবং ভয়াবহ রেকর্ডের ধারাবাহিকতাতেই আরশাদ শরিফকে হত্যার ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় সাংবাদিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সংস্থাটি এ ঘটনায় সরকারের কাছে স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে।

এ ঘটনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ টুইট করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।  
তথ্যমন্ত্রী মরিয়াম আওরঙ্গজেব দেশটির জনসাধারণকে এই মৃত্যুকে ঘিরে নিজেদের মতো করে কিছু না ভেবে নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন।

আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ ঘটনার সঠিক বিচারিক তদন্ত দাবি করেছেন। তিনি এ ঘটনাকে ‘হত্যা’ অভিহিত করে বলেছেন, ‘সত্য বলার জন্য চূড়ান্ত মূল্য দিতে হলো’।

কেনিয়ার পুলিশ ওয়াচডগ দ্য ইনডিপেনডেন্ট পুলিশ ওভারসাইট অথরিটি  (ইপোয়া) জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই একটি দলকে কাজিয়াদো কাউন্টিতে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ইপোয়ার চেয়ারপারসন অ্যান মাকোরি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের হাতে পাকিস্তানি নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

পুলিশের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ ভুলবশত মনে করেছিল,শরিফ যে গাড়িতে ছিলেন, তা চুরি হওয়া গাড়ি ছিল। পুলিশ গাড়িটিকে থামাতে ব্যর্থ হয়ে গাড়িটিকে লক্ষ্য করে গুলি করে।

সূত্র: বিবিসি ও ডন