শাহবাজ শরিফ
শাহবাজ শরিফ

বিচার বিভাগের ওপর সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের তদন্ত করবে পাকিস্তান

বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করা ও ভয়ভীতি দেখানোর যে অভিযোগ হাইকোর্টের ছয়জন বিচারপতি করছেন, তা তদন্ত করবে দেশটি। এ লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।

পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার গতকাল বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।

আজম নাজির জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও প্রধান বিচারপতি কাজী ফায়েজ ইসারের মধ্যে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

‘আমরা চাই, অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। কেননা, আমরাও এর ভুক্তভোগী।’
আজম নাজির, পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী

ওই অভিযোগ নিয়ে প্রধান বিচারপতির দপ্তরে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের ছয়জন বিচারপতির লেখা একটি চিঠি পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিচারপতিরা অভিযোগ করেন, দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ইন্টার–সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)’ রাজনৈতিক মামলায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে।

এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স মন্তব্য জানতে চাইলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম কার্যালয় কোনো সাড়া দেয়নি।

প্রধান বিচারপতি ইসার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বরাবর এ চিঠি লেখেন বিচারপতিরা। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী শাখার অংশটির (সামরিক বাহিনী) বিষয়ে এমন কোনো অব্যাহত নীতি আছে কি না, যেখানে তারা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিচারপতিদের নির্যাতন বা ব্ল্যাকমেইলের হুমকির মাধ্যমে ভয় দেখাবে, রাজনৈতিক ফলাফলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করবে—এ নিয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।’

এ প্রসঙ্গে ওই বিচারপতিরা একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। তাতে বলা হয়, কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি রাজনৈতিক মামলা গ্রহণের বিরুদ্ধে গত বছর সিদ্ধান্ত দেওয়া বিচারপতিদের দুজনকে ‘বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের’ মাধ্যমে ভয় দেখিয়েছেন আইএসআইয়ের কর্মকর্তারা।

ইমরান খান

চিঠিতে আরও বলা হয়, এর আগে এ ধরনের ঘটনাগুলো ওই ছয়জন বিচারপতি তাঁদের প্রধানের নজরে এনেছিলেন। তখনকার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে তাঁরা বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করে, আইএসআই কর্মকর্তাদের এমন চেষ্টার ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।

এই বিচারপতিরা বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বিষয়টি আইএসআইপ্রধানের নজরে আনেন এবং তিনি এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটার ব্যাপারে কথা দিয়েছেন বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেন। এরপরও হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে চলেছে।

চিঠিতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের ছয় বিচারপতি অভিযোগ করেন, দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)’ রাজনৈতিক মামলায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে।

আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে একই আদালতের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ করেছে ইমরান খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজও (পিএমএল-এন)। ২০১৭ সালে তাঁর বড় ভাই নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁকে ওই আদালত অভিযুক্ত করেছিলেন।

আজম নাজির তারার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও প্রধান বিচারপতি কাজী ফায়েজ ইসারের মধ্যে এক বৈঠকে বিচার বিভাগের ওপর সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে

আইনমন্ত্রী আজম নাজির বলেন, ‘আমরা চাই, অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। কেননা, আমরাও এর ভুক্তভোগী।’ অভিযোগ তদন্তে কমিশন গঠন বিষয়ে আজ শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।

পাকিস্তানে সরকার ভাঙা–গড়ায় দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর ভূমিকা সুপরিচিত। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রায় অর্ধেকটা সময়ই দেশ শাসন করেছেন সেনাশাসকেরা। ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফ—দুজনেরই অভিযোগ, জেনারেলদের সঙ্গে বিবাদে জড়ানোর পর তাঁদের সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে।