শাহনাওয়াজ কানভার
শাহনাওয়াজ কানভার

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, পাকিস্তানে পুলিশের গুলিতে চিকিৎসক নিহত

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে পুলিশের গুলিতে এক চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। শাহনাওয়াজ কানভার নামের ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ছিল। তবে স্থানীয় পুলিশের দাবি, তারা তাঁকে চিনতেন না, তিনি ঘটনাচক্রে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। শাহনাওয়াজ নিহত হওয়ার ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিন্দা জানিয়েছে।

শাহনাওয়াজ কানভার মহানবী (সা.)-কে অবমাননা করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর বিষয় পোস্ট করেছেন বলে সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে। এমন অবস্থায় গত মঙ্গলবার তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার মিরপুর খাস শহরের পুলিশ কর্মকর্তারা তল্লাশি চালানোর জন্য দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে থামানোর চেষ্টা করেন। তবে পুলিশকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে ওই দুই মোটরসাইকেল আরোহীর একজন গুলি ছুড়তে শুরু করেন। তখন দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয় এবং কানভার নিহত হন।

সিন্ধু প্রদেশের স্থানীয় পুলিশ প্রধান নিয়াজ খোসোর দাবি, গোলাগুলির ঘটনার পরই তাঁরা জানতে পেরেছেন যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া ব্যক্তি চিকিৎসক কানভার। অপর মোটরসাইকেল আরোহী পালিয়ে গেছেন।

খাস আসাদ চৌধুরী নামের আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসি উর্দুকে বলেন, কানভার দুর্ঘটনাক্রমে তাঁর সঙ্গীর ভুল করে ছোড়া গুলিতেই নিহত হয়েছেন।

অবশ্য চিকিৎসক কানভারের এক স্বজন বিবিসি উর্দুকে বলেন, ‘সাজানো বন্দুকযুদ্ধে’ কানভারকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও স্থানীয় পুলিশ অভিযোগটি অস্বীকার করেছে।

কানভারের মৃত্যুর ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সিন্ধু প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লিনজার।

কানভার হলেন পাকিস্তানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিহত হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছিল।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান (এইচআরসিপি) এসব ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠা দুই ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার ঘটনায়’ তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ধর্ম অবমাননাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা এবং তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি উদ্বেগের।’

কানভার নিহত হওয়ার এক দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবিতে উমেরকোট এলাকায় ইসলামপন্থীরা বিক্ষোভ করেন। তাঁর ক্লিনিকটিও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

কানভারের স্বজনেরা বিবিসি উর্দুকে বলেছেন, তাঁকে দাফন করতে যাওয়ার সময়ও তাঁদের স্থানীয় পুলিশ ও কর্মকর্তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। কয়েক মাইল দূরে গিয়ে তাঁকে সমাহিত করা হয়।