পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হলো প্রায় ১২ ঘণ্টা। আজ শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা শুরু করে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মধ্যে।সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাগারে থাকা ইমরান খানের দল পিটিআই।
আইনি প্রতিবন্ধকতার কারণে পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা পর্যন্ত বার্তা সংস্থা রয়টার্স মোট ৪৭টি আসনের চূড়ান্ত ফলাফল জানিয়েছে। এর মধ্যে পিএমএল-এন ১৭টি আসনে জয় পেয়েছে। পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন ১৪টি আসনে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ১২টি আসনে জয় পেয়েছে। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডির লিয়াকত বাগে নির্বাচনী সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বেনজির ভুট্টো। বাকি চারটি আসনে অন্য প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। নির্বাচনের আগে দুর্বৃত্তের গুলিতে এক প্রার্থী নিহত হওয়ায় একটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়েছিল আগেই। তাই গতকাল ভোট হয়েছে ২৬৫ আসনে।
ডনের খবরে বলা হয়েছে, কোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করতে চাইলে এবার ১৩৪টি আসনে জিততে হবে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানে এবার কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না–ও পেতে পারে।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত বিজয়ী কে হবেন, তা নিয়ে বিশ্লেষকেরা এখনো স্পষ্ট করে আভাস দিতে পারছেন না। এমনকি এতটা বিলম্বে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার নজির পাকিস্তানে বিরল। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর জেরে করাচি স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ও পাকিস্তানের সার্বভৌম বন্ডের দাম পড়েছে।
বিলম্বে ফলাফল ঘোষণা শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) বিশেষ সচিব জাফর ইকবাল রয়টার্সকে বলেন, ‘ইন্টারনেট ইস্যুতে’ ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব হয়েছে, তবে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি।
এর আগে গতকাল ভোট গ্রহণের দিনে পাকিস্তানজুড়ে বন্ধ রাখা হয়েছিল মুঠোফোন সেবা। দেশটির অনেক অঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা কিংবা গতি কম থাকার খবরও জানা গিয়েছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেয় দেশটির সরকার। তবে আজ পাকিস্তানে মুঠোফোন সেবা চালু রয়েছে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাকা নওয়াজকে সমর্থন দিচ্ছে পাকিস্তানে ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচিত সামরিক বাহিনী। পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের ইতিহাসে বেশির ভাগ সময় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সেনা–সমর্থিত সরকার দেশ শাসন করেছে।
গতকাল লাহোরে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নওয়াজ শরিফ। এ সময় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের বিষয়ে ইঙ্গিত করা হলে তিনি বলেন, ‘জোট সরকারের কথা বলবেন না। একটি সরকারের জন্য স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ... অন্যের ওপর নির্ভর করে থাকা উচিত হবে না।’