পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন ‘সংকটের দোরগোড়ায়’ চলে গেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এই অবস্থা থেকে বের হতে পাকিস্তানের এখন কিছু সাহসী অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, ‘দুর্বল ও অস্থিতিশীল’ প্রবৃদ্ধিকে টেকসই এবং বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাহিদা মোকাবিলায় পাকিস্তানকে গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই ছয় শত কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে আইএমএফ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের রিজার্ভ এখন তলানিতে। দেশটিতে মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চিত আছে। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে পাকিস্তান দেড় মাসের মতো আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে। ইমরানের সরকার গত বছরের আগস্ট থেকে আইএমএফের কাছে অর্থ সহায়তা চেয়ে আবেদন করে যাচ্ছে।
১৯৮০ থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানকে ১৩ বার অর্থ সহায়তা দিয়েছে আইএমএফ। এবারে ছয় শত কোটি ডলারের মধ্যে ১ কোটি ডলার দ্রুত পাকিস্তানকে হস্তান্তর করা হবে। বাকি অর্থ আগামী তিন বছরে দেওয়া হবে।
আইএমএফের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রথম উপনির্বাহী পরিচালক ডেভিড লিপটন বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে পাকিস্তানের দরকার সমতা ও স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে কর ব্যবস্থার সংস্কার।
লিপটন বলেন, কার্যকরভাবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার সঙ্গে সরকারি ব্যয় করার জন্য প্রদেশগুলোর সহায়তার প্রয়োজন হবে পাকিস্তানের।
পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করার ক্ষেত্রে সমন্বয় নীতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মতো দিয়েছেন লিপটন। তিনি বলেন, সামাজিক সহায়তা প্রোগ্রাম, নারীর ক্ষমতায়ন ও দরিদ্র অঞ্চলে বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে এটা অর্জিত হতে পারে।
লিপটনের মতে, অস্থিতিশীলতা দূর, রিজার্ভকে পুনর্নির্মাণ ও মুদ্রাস্ফীতি কমাতে নমনীয় বাজার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তিনি বলেন, দেশটির অর্থনীতি শক্তশালী করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির পথে থাকা সকল বাধা দুর করতে হবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে গোষ্ঠীকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক নীতিমালা, বাজেটে বড় ধরনের ঘাতটি ও দুর্বল মুদ্রানীতি ব্যবস্থা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সংকটের দ্বার প্রাপ্তে নিয়ে এসেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি, বৈদেশিক মুদ্রার হ্রাস ও সরকারি ঋণ। এ ছাড়া কাঠামোর দুর্বলতা, কর অব্যবস্থাপনা ও ব্যবসার প্রতিকূল পরিবেশ দেশটির অর্থনীতিকে ক্রমাগত নিচের দিকে টেনে নিয়েছে।
আইএমএফ জানিয়েছে, দ্রুত কার্যকর নীতি গ্রহণ না করলে অর্থনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থা অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়বে। একই সঙ্গে দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে পাকিস্তান ব্যর্থ হবে।
সম্প্রতি বছরে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে মতো বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো থেকে পাকিস্তান কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থসহায়তা পেয়েছে।