ক্ষমতাচ্যুত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ স্বীকার করেছেন, ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় পাকিস্তানের সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল। তিনি এও স্বীকার করেন যে ইচ্ছা থাকলে এ ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা এড়ানো সম্ভব ছিল। গতকাল শনিবার পাকিস্তানের দৈনিক ডন-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন তিনি। নওয়াজ শরিফ দুঃখ করে বলেন, দিন দিন পাকিস্তান নিজেদের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ে তাজ হোটেল ও ছত্রপতি শিবাজি রেলওয়ে স্টেশনসহ প্রায় ১২টি স্থাপনায় একযোগে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এ হামলায় ১৬৬ জন নিহত হন। এই হামলার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবাকে দায়ী করে আসছে ভারত। ১০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি ভারতের বাণিজ্যিক নগরীসহ প্রায় পুরো দেশকে তিন দিন ধরে অচল করে রেখেছিল। হামলাকারীদের মধ্যে আজমল কাসাব নামের একজনকে আটক করা হয়। পরে ভারতে ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়। হামলাকারীদের মধ্যে অন্যরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন। পাকিস্তান প্রথম দিকে ওই হামলার সঙ্গে নিজেদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে। পরে কাসাব ও ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীরা পাকিস্তানি নাগরিক বলে প্রমাণিত হলে পাকিস্তান বিষয়টি স্বীকার করে নেয়।
সাক্ষাৎকারে নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানভিত্তিক উগ্রবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী হাফিজ সাঈদ এবং জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের নাম সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেননি নওয়াজ শরিফ।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে বলছে মুম্বাই হামলায় এই দুজনের কথা। দেশটি বলে আসছে, করাচি থেকে সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ে আসে লস্কর-ই-তাইয়েবার জঙ্গিরা। হামলার পুরো ছক কষেছিল পাকিস্তানের প্রভাবশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই)।
নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘আমাদের দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলো বেশ সক্রিয়। তাঁরা “পাকিস্তানের নাগরিক নন” বলে আর কত দিন দায় এড়াব। আমাদের কি উচিত তাঁদের সীমান্ত পাড়ি দিতে দেওয়া? মুম্বাই গিয়ে ১৫০ জনকে (হবে ১৬৬) হত্যার অনুমতি তাঁদের কে দিয়েছিল? বলুন আমাকে। কেন আমরা তাঁদের বিচারকাজ শেষ করতে পারলাম না?’
এর আগে ২০১৫ সালে ইংরেজি দৈনিক ডন-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফআইএ) সাবেক মহাপরিচালক তারিক খোসা বলেছিলেন, ভারতের মুম্বাইয়ে ২০০৮ সালের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা হয় পাকিস্তানে। হামলাকারীরা যায়ও পাকিস্তান থেকেই। ‘মুম্বাই অ্যাটাকস ট্রায়াল’ শিরোনামের ওই নিবন্ধে তারিক খোসা লিখেছেন, মুম্বাইয়ের ওই ভয়ংকর ঘটনাকে উপেক্ষা করতে পারে না পাকিস্তান। ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী এবং হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সবাইকেই নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।
২০০৯ সাল থেকেই মুম্বাই হামলার পর থেকেই মামলার বিচারকাজ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে চলছে। কিন্তু, এত দিনেও সেই মামলার তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। ভারত বারবার অভিযোগ করে আসছে যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেই মামলাটি এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো উৎসাহ দেখা যায়নি। এর বদলে তারা কূটনৈতিক স্তরে ক্রমাগত দর-কষাকষি করে চলেছে।
অন্যদিকে, ইসলামাবাদের অভিযোগ, দিল্লি মুখে যা-ই বলুক না কেন, হাফিজ সৈয়দ ও অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। ১০ মাস গৃহবন্দী থাকার পর হাফিজ সাঈদকে গত বছরের নভেম্বর থেকে বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ওই সময় পাকিস্তান বলেছিল, ‘আমাদের আইন সবার জন্যই সমান।’