ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে কোনো চাপের মুখে ছাড়া হয়নি বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। বিবিসি উর্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এ কথা বলেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলা ও ভারতীয় পাইলটের মুক্তির দাবিতে সৃষ্ট উত্তেজনা কমাতে পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব চাপ দিয়ে আসছিল।
তবে এই চাপের কথা সরাসরি নাকচ করে দেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ ছিল না। কোনো বাধ্যবাধকতাও ছিল না।’
সাক্ষাৎকারে কুরেশি বলেন, ‘আমরা তাদের (ভারত) জানাতে চাই, আমরা আপনাদের দুঃখ বাড়াতে চাই না। আমরা ভারতীয়দের দুর্দশা চাই না। আমরা শান্তি চাই।’ তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান অতীতে ফিরতে চায় না। কিন্তু যদি ফিরতে হয়, তাহলে আমাদের দেখতে হবে কেমন করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে হামলা, পাঠানকোট ও উরিতে হামলা হয়েছে। আর সে এক দীর্ঘ ইতিহাস।’
এর আগে কুরেশি পাকিস্তানের জিয়ো নিউজকে বলেন, দেশ বা আঞ্চলিক শান্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে এমন রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু পাকিস্তান মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’
কুরেশি বলেন, জইশ-ই-মুহাম্মদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দিতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। গতকাল শুক্রবার তিনি বলেছেন, জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার পাকিস্তানে আছেন।
৫৮ ঘণ্টা বন্দিদশা কাটিয়ে গতকাল শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেশের মাটিতে পা রাখেন অভিনন্দন। এ সময় তাঁর মুখে ছিল হাসি। তিনি বলেন, ‘দেশে ফেরত এসে ভালো লাগছে।’
৩৪ বছর বয়সী এই পাইলটকে পাঞ্জাবের অমৃতসর জেলায় আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান। পুলওয়ামা–কাণ্ডের জবাবে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযান এবং তার পাল্টা পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর অভিযান রুখতে গিয়ে অভিনন্দনের মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয় পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। এরপর তিনি পাকিস্তানের হাতে যুদ্ধবন্দী হন। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। তবে ভারত বলে আসছে জেনেভা কনভেনশনের আওতায় পাকিস্তান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের সর্বশেষ সংকটের শুরু গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। ওই ঘটনার ১২ দিন পর গত মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। পরদিন দুই দেশের সেনাদের মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে গোলা ও গুলিবিনিময় হয়। বুধবার সকালে বালাকোটে হামলার বদলা নেয় পাকিস্তান। এ সময় আকাশযুদ্ধে ভারত দুটি যুদ্ধবিমান হারায় বলে দাবি করে পাকিস্তান। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দী হন ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন। আর পাকিস্তান একটি যুদ্ধবিমান হারায় বলে দাবি করে ভারত।