বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা নিয়ে তাঁর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় পিপিপির অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা চাচ্ছেন না বিলাওয়াল এই সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিক। তবে দলের আরেকটি অংশের নেতারা মনে করছেন, তরুণ প্রজন্ম ও বহির্বিশ্বের কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বিলাওয়াল দায়িত্ব নিলে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক হবে। খবর দ্য ডনের
ইমরান খান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সমালোচনামুখর ছিল বিরোধী জোট। তাই কে হচ্ছেন নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। এই পদে পাকিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম দল পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নামই শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৩৩ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, মন্ত্রিত্বের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তাঁর দল।
এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে পিপিপির মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। বিলাওয়ালকে যাঁরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে দেখতে চাচ্ছেন তাঁদের যুক্তি, এতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা হবে বিলাওয়ালের। ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী হলে ওই অভিজ্ঞতা তাঁর কাজে লাগবে বলে মনে করছে দলের এই অংশ।
অপরদিকে পিপিপির আরেকটি পক্ষ মনে করছে, শাহবাজ শরিফের অধীনে জোট সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া ঠিক হবে না বিলাওয়ালের। তাহলে জোট সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তর দল হিসেবে পিপিপি প্রধান বিলাওয়ালের গুরুত্ব কমে যাবে। বিরোধিতার আরেকটি কারণ হলো, রাজনীতির মাঠে প্রধান প্রতিপক্ষ পিএমএল-এনের অধীনে দলের চেয়ারপারসন কাজ করবেন সেটি চান না পিপিপির অধিকাংশ কর্মী-সমর্থকেরা।
এদিকে পিপিপির একজন জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা বলেন, দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি চেয়ারম্যানকে (বিলাওয়াল ভুট্টো) পরামর্শ দিয়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। বিলাওয়াল ভুট্টো জনসংখ্যার বৃহৎ এই অংশটির প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ ছাড়া মায়ের (বেনজির ভুট্টো) কারণে আন্তর্জাতিক মহলে বিলাওয়ালের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা আছে। যেটি ব্যবহার করে তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারবেন।
ওই আইনপ্রণেতা আরও বলেন, দেশের যেসব নাগরিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো কিংবা বেনজির ভুট্টোকে দেখননি, তাঁদের মধ্যে দলের গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে বিলাওয়ালের নতুন দায়িত্ব ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করে তাঁর যে অভিজ্ঞতা হবে, সেটি ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হলে বিলাওয়ালের কাজে লাগবে। তবে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, আগামী দু–এক দিনে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে বলেও মনে হচ্ছে না।
অপরদিকে যে পক্ষটি বিলাওয়ালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নেওয়ার বিরোধিতা করছে, তারা বলছে, দায়িত্ব নিলে দলীয় কাজে পর্যান্ত সময় দিতে পারবেন না দলের চেয়ারম্যান। ফলে আগামী নির্বাচনে ভুগতে হতে পারে পিপিপিকে।
আরেকটি মজার বিষয় হলো, সদ্যবিদায়ী ইমরানের মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশিও জাতীয় পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে বিলাওয়ালকে শাহবাজের মন্ত্রিসভায় না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
শাহ মাহমুদ কোরেশি পিপিপি সরকারের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির আমলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বলেন, জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাতি বিলাওয়ালকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মানাবে না। এ ছাড়া দলের কর্মীরাও এ সিদ্ধান্ত মানবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নতুন সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জোট সরকারের মন্ত্রিসভার দায়িত্ব বন্টন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি তারা। এ ছাড়া স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মতো সাংবিধানিক পদে মনোনোয়ন নিয়েও তারা এখনো ভাবেনি।
পিপিপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, মন্ত্রিসভার চেয়ে সাংবিধানিক যেকেনো পদ পাওয়ার বিষয়ে তাঁরা অধিক আগ্রহী। তিনি বলেছেন, বিগত সরকারের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদত্যাগ করায় পদ দুটি এখন শূন্য।
ওই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, সামনে প্রেসিডেন্টের পদও শূন্য হতে পারে। কারণ, বর্তমান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন কিংবা অভিশংসনের মাধ্যমে তাঁকে অপসারণ করা হতে পারে।