পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার দেশটির জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব তুলেছে বিরোধী দলগুলো। অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার আগের দিন ইসলামাবাদে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বিশাল সমাবেশ করে। গতকাল বড় এক সমাবেশ করে বিরোধী জোট পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন (পিডিএম)। সমাবেশে বিরোধী জোটের নেতারা বলেন, ইমরানের দলের প্রথম উইকেটের পতন হয়েছে। এবার ইমরানের পদত্যাগের পালা। খবর পাকিস্তানের ডন পত্রিকার।
প্রথম উইকেট বলতে বিরোধীরা মূলত পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারের পদত্যাগের কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মতো গতকাল পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তোলা হয়। অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার পরই পদত্যাগ করেন বুজদার। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী গভর্নরের বদলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
বিরোধী জোটের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ। এ ছাড়া পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা হামজা শেহবাজ, জমিয়াতে-ই-উলেমা-ই-ইসলামের প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমানসহ জোটের অন্য নেতারাও ছিলেন। বিরোধীরা শত শত মানুষের বহর নিয়ে ২৬ মার্চ লাহোর থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে যাত্রা করেন। গতকাল ইসলামাবাদে সমাবেশ করেন তাঁরা।
সমাবেশে মরিয়ম নওয়াজ বলেন, নিজের শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য ইমরান খান ধর্মকে ব্যবহার করছেন। নিজেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী পাঞ্জাবে তাঁর প্রধান খুঁটি মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারকে বিসর্জন দিয়েছেন। ইমরান খানের উদ্দেশে মরিয়ম নওয়াজ বলেন, ‘নিজের ক্ষমতা বাঁচাতে আপনি তো আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগীকে পানিতে ছুড়ে মারতে পিছপা হননি। এই জীবনে এত অকৃতজ্ঞ মানুষ আমরা দেখিনি। পিটিআই নেতা জাহাঙ্গীর তারিনকেও বিসর্জন দিয়েছেন।’
ইমরান খানকে সরাতে শেষ ধাক্কা দেওয়ার সময়টা চলে এসেছে জানিয়ে মরিয়ম নওয়াজ আরও বলেন, এবার কেউই তাঁকে উদ্ধার করতে আসবে না।
মরিয়ম নওয়াজ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে মানুষের আস্থা হারিয়েছেন। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে হওয়া নির্বাচনও এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। গত কয়েক মাসে মোট ১৬টি উপনির্বাচনের মধ্যে ১৫টিতেই পরাজিত হয়েছে তাঁর দল। গতকাল জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার প্রসঙ্গ টেনে মরিয়ম নওয়াজ বলেন, ‘আজ তিনি পার্লামেন্ট এমনকি তাঁর দলের কাছেও আস্থা হারিয়েছেন।’ ইমরান খানের এখন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকার ও দেশের ভাগ্য নির্ধারণের কোনো অধিকার নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সদস্যসংখ্যা ৩৪২। অনাস্থা প্রস্তাব পেশের জন্য ৬৮ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। প্রস্তাব পেশের পক্ষে ভোট দেন ১৬১ জন আইনপ্রণেতা। পার্লামেন্টে প্রস্তাব পেশের পরই ৩১ মার্চ বিকেল চারটা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান।
ওই দিন প্রস্তাবের ওপর বিতর্ক শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে অন্তত ১৭২ জন আইনপ্রণেতাকে ভোট দিতে হবে।
ইমরানের উদ্দেশে মরিয়ম নওয়াজ বলেন, ‘আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, অনাস্থা ভোটের দিন প্রমাণ করে দেখান, ১৭২ জন আইনপ্রণেতা আপনার পক্ষে রয়েছেন।’