পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছেন দেশটির একটি আদালত। যে প্রক্রিয়ায় পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল, তাকে অসাংবিধানিক উল্লেখ দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ সোমবার লাহোরের হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিলের রায় দেন। যে বিশেষ আদালত এই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল, সেটির গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে গত ডিসেম্বরে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন পারভেজ মোশাররফ। এরপর লাহোর হাইকোর্ট এই রায় দিলেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারক সৈয়দ মাজহার আলী আকবর নাকভি, মোহাম্মদ আমির ভাট্টি ও চৌধুরী মাসুদ জাহাঙ্গীরের বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিলের রায় ঘোষণা করেন। ফেডারেল সরকার ও পারভেজ মোশাররফের আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টের এই রায়ের পর বিশেষ আদালতের রায় এখন অর্থহীন।

মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর লাহোর হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানিয়ে পারভেজ মোশাররফ বলেছিলেন, রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে সংবিধানের ৪, ৫, ১০ ও ১০-ক অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনও জানান তিনি।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ইশতিয়াক এ. খান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘অভিযোগ দায়ের করা, বিশেষ আদালতের গঠন ও প্রসিকিউশন টিমের নির্বাচন- পুরো প্রক্রিয়াটাই অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। আদালতের এই সিদ্ধান্তের অর্থ হলো, পারভেজ মোশাররফ এখন সম্পূর্ণ মুক্ত।’

পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে গত ১৭ ডিসেম্বর ইসলামাবাদের বিশেষ আদালত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে এ ধরনের রায়ের ঘটনা এটিই প্রথম। ২০১৬ সাল থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের দু্বাইয়ে অবস্থান করা পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। মামলাটি ২০১৩ সাল থেকে চলে আসছে। ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ মোশাররফকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিশেষ আদালতের কাছে বিচারের জন্য সব তথ্যপ্রমাণ পেশ করা হয়। তবে আপিল ফোরামে মামলাটি তোলার পর বিচারকাজ দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ে এবং মোশাররফ ২০১৬ সালের মার্চে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যান। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাঁকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন পারভেজ মোশাররফ। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের নভেম্বরে তিনি দেশটির সংবিধান বাতিল করে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এর বিরুদ্ধে ওই সময় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। অভিশংসনের ঝুঁকি এড়াতে তিনি ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন:
রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড
মৃত্যুদণ্ডের রায় চ্যালেঞ্জ করলেন পারভেজ মোশাররফ